চারদিকে শরতের শুভ্র কাশফুল, লেকের ধারে শরীর মন জুড়িয়ে দেওয়া বাতাস। কেউ বসে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউবা ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে নগরবাসীর অনেকেই ছুটে আসছেন উত্তরা দিয়াবাড়ির কাশবনে। দুপুরের খরতাপ কমে আসতেই লোকসমাগমে জমজমাট হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের সম্প্রসারিত প্রকল্পের অংশ দিয়াবাড়ি এখন কাশফুলের সাদা চাদরে ঢাকা। বিশাল খোলা জায়গা আর কাশবনের ভেতর দিয়ে যাওয়া পথ নগরবাসীর জন্য হয়ে উঠেছে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জায়গা। এ কারণে এখানে গড়ে উঠেছে হালকা খাবারের দোকানপাটও।
শনিবার দিনে দুপুর থেকেই শুরু হয় মানুষের সমাগম। বিকেলে এলাকা যেন রূপ নেয় গ্রামীণ মেলায়। ঘুরছে নাগরদোলা, সাজানো হয়েছে নানা রকম খাবারের দোকান। ফুচকা, চটপটি থেকে শুরু করে ভাজাপোড়া সবই পাওয়া যায়।
আজিমপুর থেকে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন আবুল বরকত। ছোটবেলায় গ্রামের বাড়ি নাটোরে নদীর ধারে কাশফুল দেখার স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘সন্তানদের নাটোরে নিয়ে যাওয়া কঠিন। তাই দিয়াবাড়িতে এসেছি কাশফুল দেখাতে। এত কাশফুল দেখে মনটা ভালো হয়ে গেছে। ছবি তুলেছি, সন্ধ্যায় চলে যাব।’
বনানী থেকে আসা এআইইউবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমন সাহা জানান, ‘ফেসবুকে কাশফুলের ছবি দেখে আসার ইচ্ছে হয়েছিল। তাই বন্ধুরা মিলে এসেছি। ছবি তুলছি, বেশ ভালো লাগছে।’
দিয়াবাড়ির বটতলা থেকে কিছুটা সামনেই ৩ নম্বর সেতু। সেতুর দুই পাশে লেকের ধারে গড়ে উঠেছে বোট হাউস। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বানানো বসার জায়গা আর সারি সারি বাঁধা প্যাডেল বোট (পায়ে চালিত নৌকা) ভাড়া নিয়ে ঘোরা যায় ঘণ্টা ভিত্তিতে।
মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আমিন সরকার বলেন, ‘কাশফুল দেখতে এসেছিলাম। এখানে এসে দেখি নৌকায় চড়ার সুযোগও আছে। পরিবারের সবাই মিলে নৌকায় ঘুরে ভালো লাগছে। তবে লেকের পানি যেন দূষিত না হয়, সে জন্য সবার সচেতন থাকা দরকার।’
দিয়াবাড়ির সড়কের ভেতরের দিকটা সুনসান। তবে একটু পরপর নীরবতা ভেঙে উড়ে যায় উড়োজাহাজ। ঢাকায় কাছ থেকে উড়োজাহাজ ওঠানামা দেখার জন্যও দিয়াবাড়ি অন্যতম সেরা জায়গা।
তবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কাশফুল ফাঁকা জায়গা জুড়ে থাকলেও অনেক জায়গায় মাটি নরম, কোথাও কোথাও চোরাবালির মতো। হাঁটার সময় তাই সাবধান থাকা জরুরি।
নিসর্গবিদ মোকারম হোসেন জানান, ‘কাশফুল দেখার এটাই উপযুক্ত সময়। সর্বোচ্চ আর ১৫–২০ দিন এই ফুল থাকবে।’
কীভাবে যাবেন দিয়াবাড়ি
উত্তরা রুটের গাড়িতে উঠে হাউস বিল্ডিং নেমে ‘জনপথ’ ধরে মাসকট প্লাজার সামনে থেকে লেগুনা পাওয়া যায়। ভাড়া ২০–৩০ টাকা।
লেগুনায় না উঠতে চাইলে রিকশা বা অটোরিকশায় যাওয়া যাবে।
এছাড়া মিরপুর বেড়িবাঁধ হয়ে আবদুল্লাহপুরগামী গাড়িতে উঠে পঞ্চবটী নেমে সেখান থেকে হেঁটে যাওয়া সম্ভব (১৫–২০ মিনিট)।
শরতের সাদা কাশফুল দেখতে চাইলে এখনই সময়। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন নগরবাসী।
এসআর