আজকের রাত আকাশপ্রেমীদের জন্য এক বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশ থেকে দেখা যাবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। চন্দ্রগ্রহণটি শুরু হবে আজ রবিবার রাত ৯টা ২৭ মিনিটে, আর চলবে সোমবার ভোর পর্যন্ত- মোট সাত ঘণ্টা ২৭ মিনিট। এসময় চাঁদকে দেখা যাবে রক্তিম লাল রঙে।
কিন্তু কেন চন্দ্রগ্রহণ হয় কিংবা কেন ই বা চাঁদকে লাল দেখা যাবে। চলুন জেনে নিই, এ বিষয়ে বিজ্ঞান কি বলে-
আমরা সবাই জানি চাঁদ যেমন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে ঠিক তেমন ভাবেই পৃথিবীও সূর্যকে কেন্দ্র করে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরছে। আর এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে একটা সময় চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় চলে আসে।
যখন এই সরলরেখায় চাঁদ ও সূর্যের মাঝে পৃথিবী চলে আসে এবং যেহেতু চাঁদের নিজস্ব আলো নেই, তখন সূর্যের আলো পৃথিবীর কারণে চাঁদে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর ছায়ার জন্য চাঁদে সূর্যের আলো পৌঁছায় না। পৃথিবীর বাধার কারণে চাঁদ যখন সূর্যের আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে ব্যর্থ হয়, তখন কিছু সময়ের জন্য চাঁদকে অদৃশ্য মনে হয়। মহাজাগতিক এই ঘটনাই হলো চন্দ্রগ্রহণ।
চন্দ্রগ্রহণ প্রধানত ৩ ধরনের হয়ে থাকে। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ, আংশিক চন্দ্রগ্রহণ ও পেনাম্ব্রাল চন্দ্রগ্রহণ।
আমাদের পৃথিবী যখন, সূর্যকে আংশিক ঢেকে ফেলে, তখন পৃথিবীর ছায়ার জন্য চাঁদের কিছু অংশ অদৃশ্য হয়ে যায় আর তখন তাকে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়।
আর পৃথিবী যখন সূর্যকে সম্পূর্ণরূপে ঢেকে নেয়, তখন বিপরীত স্থানে অবস্থান করা চাঁদকে পুরোপুরি দেখা যায় না, একে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বলে।
অন্যদিকে চাঁদ যখন পৃথিবীর ছায়ার দূরবর্তী স্থান দিয়ে অতিক্রম করে, তখন তাকে পেনাম্ব্রাল চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়। এই ধরনের চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ খুব কম পরিমাণে অস্পষ্ট হয়ে থাকে, যার ফলে তা আমাদের চোখে খুব কম ধরা পড়ে।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর গাঢ় ছায়া চাঁদের উপর পড়ায় চাঁদ প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু না হয়ে চাঁদ কেন রক্তিম বর্ণ ধারণ করে?
কারণ তখনও সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা ও গ্যাস দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে চাঁদের উপর পড়ে। আর লাল বর্ণের আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অন্যান্য বর্ণের আলোর তুলনায় বেশি হওয়ায় এটি সব থেকে কম বিচ্ছুরিত হয়। তাই ওই সময় সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে লাল বর্ণের আলো চাঁদের উপর পড়ে তাই চাঁদকে তখন লাল দেখায়।
বাংলাদেশের আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে আজকের এই বিরল দৃশ্য দেখা যাবে পুরোপুরি। পূর্ণ গ্রহণ দেখা যাবে ইন্দোনেশিয়ার হিলা দ্বীপ থেকে শুরু করে আফ্রিকার কেনিয়া পর্যন্ত। তবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ অঞ্চল থেকে এই গ্রহণ দেখা যাবে না।
চন্দ্রগ্রহণ আমাদের মনে করিয়ে দেয় মহাবিশ্বের নিখুঁত সামঞ্জস্য আর প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্যের কথা
এসকে/আরইউ