কুমিল্লা নগরীতে মা-মেয়ের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। পুলিশ তাদের মরদেহ উদ্ধার করেছে। রবিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে কালিয়াজুরী এলাকার পিটিআই মাঠসংলগ্ন নীলি কটেজের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে মাথায় টুপি, পাঞ্জাবি-পাজামা পরা এক অজ্ঞাত ব্যক্তির সন্দেহজনক যাতায়াত ধরা পড়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।
নিহতরা হলেন- মা তাহমিনা বেগম (৫০) ও তার মেয়ে সুমাইয়া আফরিন রিংকি (২২)।
নিহত তাহমিনা বেগম উত্তর কালিয়াজুরী কুরের পার গ্রামের মৃত শামসুল হকের বড় মেয়ে। তার স্বামী নুরুল ইসলাম কুমিল্লা আদালতের হিসাবরক্ষক ছিলেন। তিনি গত বছর মারা যান। মেয়ে রিংকি ফয়জুন্নেছা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। পরিবারের বড় ছেলে ফয়সাল ঢাকায় আইনজীবী এবং ছোট ছেলে আল আমিন কুমিল্লা ইপিজেডে চাকরি করেন।
এদিকে, স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, রবিবার দিবাগত রাতে সাড়ে ১১টার দিকে নিহতের বড় ছেলে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরে দরজা খোলা পান। ভেতরে গিয়ে মা তাহমিনা বেগম ও ছোট বোন সুমাইয়া আফরিন রিংকিকে খাটে শুয়ে থাকতে দেখেন। তিনি তখন ছোট ভাইয়ের আসার অপেক্ষা করেন। ছোট ভাই বাসায় আসার পরও তাদের কোনো নড়াচড়া না দেখে ডাকতে গেলে মৃত অবস্থায় পান বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নীলি কটেজের মালিক আনিসুর রহমান বলেন, রাত ১টায় নিহতের ছেলে আল আমিন আমাকে কল করে জানায় তার মা ও মেয়েকে কেউ হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে। আমি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ২টি আলাদা কক্ষে মা ও মেয়ের মরদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম বলেন, আমরা খোঁজ খবর নিয়ে তারপর দেখবো কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন রবিবার সকাল ৮ টায় সন্দেহজনক এক ব্যক্তি নীলি কটেজের দ্বিতীয় তলায় ভাড়া বাসায় প্রবেশ করেন। বেলা ১১ টার দিকে তাকে বাসা থেকে বের হতে দেখা যায়। তবে এর কিছুক্ষণ পর সকাল সাড়ে ১১টায় আবারও বাসায় ঢোকেন অজ্ঞাত সেই ব্যক্তি। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ফুটেজে তার বের হওয়ার কোনো দৃশ্য পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মহিনুল ইসলাম বলেন, রাত ২টার দিকে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ থানায় নিয়ে আসি। লাশের শরীরে গুরুতর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে, নিহত মেয়ের গলায় হালকা দাগ রয়েছে ও মায়ের চোখে রক্তের চিহ্ন পেয়েছি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সিসিটিভি বিশ্লেষণ করে আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল মালিক বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। খাটের নীচে বালিশ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধ করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর রহস্য পুরোপুরি জানা যাবে। এ ঘটনায় পুলিশি তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া চলছে।
এইচএ