এইমাত্র
  • নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে নিরাপত্তা জোরদার
  • যমুনায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর, নৌ চলাচল ব্যাহত
  • সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে এভারকেয়ার ছাড়লেন হাদি
  • আগামীকাল সাময়িক বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল
  • হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় গুজবে সয়লাব ফেসবুক : ফ্যাক্টওয়াচ
  • কওমী মাদ্রাসার বোর্ড পরীক্ষার সময়সূচি এগিয়ে আনা হয়েছে
  • কলম্বিয়ায় স্কুলবাস খাদে পড়ে নিহত ১৭
  • হাদির ওপর হামলায় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না: সিইসি
  • হাদিকে গুলি করা অভিযুক্ত মাসুদের ভারতে গিয়ে সেলফি
  • ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় আরও ২ জন আটক
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    সাতকানিয়ায় হাইড্রোলিক হর্নে নৈরাজ্য, শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ জনজীবন

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম
    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম

    সাতকানিয়ায় হাইড্রোলিক হর্নে নৈরাজ্য, শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ জনজীবন

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম

    শব্দ দূষণ রোধে সরকার কঠোর অবস্থান নিলেও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এখনও অবাধে ব্যবহার হচ্ছে হাইড্রোলিক হর্ন। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মহাসড়ক ও আশপাশের সড়কে চলাচল করা বাস, মিনিবাস ও ট্রাকের অবিরাম হর্নে মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

    বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার কেরানীহাটের উত্তরে রেলক্রসিং এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। এ সময় ঈগল, মারসা ও পূরবী পরিবহনের পাঁচটি গাড়ি থেকে হাইড্রোলিক হর্ন খুলে ফেলা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০-এর বিভিন্ন ধারায় ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

    স্থানীয়রা জানান, কেরানীহাট এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহনের হর্নে মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অনেকেরই শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দোকানদাররা জানান, ক্রেতাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলা কঠিন হয়ে পড়ে।

    স্থানীয় কলেজছাত্রী নাসরিন আক্তার বলেন, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ভয় লাগে। কখন হঠাৎ হাইড্রোলিক হর্ন কানে বাজবে বলা যায় না। মাথা ধরেই যায়।

    অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল গফুর বলেন, আমাদের বয়স হয়েছে, ঘুম দরকার। কিন্তু রাতে ট্রাক-বাসের হর্নে ঘুম ভেঙে যায়। এভাবে আর কত সহ্য করা যায়?

    অভিযানে ধরা পড়া এক বাসচালক বলেন, সড়কে প্রচণ্ড ভিড় থাকে। ছোট গাড়ি, রিকশা বা পথচারী সাইড দেয় না। তাই জোরে হর্ন না বাজালে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

    একজন পরিবহন মালিক জানান, ড্রাইভারদের ওপর প্রচণ্ড চাপ থাকে। সময়মতো না পৌঁছালে যাত্রী রাগ করে, মালিকও অসন্তুষ্ট হয়। তাই অনেকেই হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।

    তবে পরিবেশবিদরা মনে করেন, এটি কেবল অজুহাত। ট্রাফিক শৃঙ্খলা ঠিক থাকলে এবং আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করলে হাইড্রোলিক হর্ন ছাড়াই গাড়ি চালানো সম্ভব।

    বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০ অনুযায়ী হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে বাজারে এসব হর্ন বিক্রিও বেআইনি। তবুও শহর থেকে শুরু করে গ্রামীণ সড়ক পর্যন্ত সর্বত্র হাইড্রোলিক হর্ন অবাধে ব্যবহার হচ্ছে। আইন প্রয়োগে ধারাবাহিকতা না থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

    বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইড্রোলিক হর্নের শব্দ ৯০–১০০ ডেসিবেলেরও বেশি হয়। এটি কানে তাৎক্ষণিক ক্ষতি করতে পারে। দীর্ঘদিন এ শব্দে থাকলে স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে।

    পরিবেশবিদদের মতে, শব্দ দূষণ এখন নীরব ঘাতক। ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ—সবকিছুর সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। শুধু অভিযান নয়, বাজার থেকে এসব হর্ন তুলে দেওয়া এবং গণসচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

    তবে অনেকেই জানেন না হাইড্রোলিক হর্ন আইনত নিষিদ্ধ। যাত্রীরাও অনেক সময় চালকদের উৎসাহ দেন হর্ন বাজাতে। তাদের ধারণা—হর্ন না বাজালে গাড়ি আসছে তা বোঝা যাবে না। এমন মানসিকতা ভাঙতে সচেতনতা প্রচারণা চালানো জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

    সংশ্লিষ্টদের মতে, সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে নিয়মিত অভিযান ও পর্যবেক্ষণ চালাতে হবে। বাজার থেকে হাইড্রোলিক হর্নের সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। চালকদের বিকল্প হর্ন ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

    উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ এবং এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমরা জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত রাখব।’

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…