কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সড়কে বিশালাকৃতির একটি হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর সেই হাতির পিঠে থাকা মাহুতের নির্দেশে থামানো হচ্ছে চলন্ত বাস, ট্রাক, সিএনজি ও ব্যক্তিগত গাড়ি। হাতির শুঁড় উঁচিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আদায় করা হচ্ছে টাকা—এভাবেই অভিনব কৌশলে চলছে চাঁদাবাজি। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন চালক, যাত্রী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কটিয়াদী উপজেলার বেতাল এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, বড় একটি হাতি রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে চাঁদা আদায় করছে। হাতির পিঠে বসা যুবক আরিফুল ইসলাম, যিনি নিজেকে হাতির মালিক দাবি করেন। তার ইশারায় হাতিটি যাত্রীবাহী ও মালবাহী যানবাহনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় এবং যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত সরে দাঁড়ায় না।
এতে সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, পাশাপাশি মানুষের মনে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক ও বিরক্তি।
সিএনজি চালক মনির হোসেন বলেন, ‘৩০ টাকার ভাড়ায় ১০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আবার কিছুক্ষণ পর যদি আবার হাতির সামনে পড়ি, আবার দিতে হবে। এটা খুব অন্যায়।’
অটোরিকশা চালক মোবারক হোসেন বলেন, ‘হাতিকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু যাত্রীরা ভয় পেয়ে হুড়োহুড়ি করে। এতে গাড়ি উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। আমরা গরীব মানুষ—১০ টাকা কামাই করে যদি ২০ টাকা চাঁদা দেই, তাহলে বাঁচবো কীভাবে?’
এক যাত্রী ফারুক জানান, ‘হাতি সামনে এসে দাঁড়িয়ে গাড়িকে শুঁড় দিয়ে চেপে ধরে। ২০ টাকার নিচে নাকি কিছুই নেয় না। বাধ্য হয়ে দিতে হয়।’
প্রাইভেটকার চালক রুবেল মিয়া বলেন, ‘প্রথমে ২০ টাকা দিয়েছি, কিন্তু নেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে ৫০ টাকা দিতে হয়েছে। আমার বাচ্চারাও ভয় পেয়ে কান্না শুরু করে। এটা চাঁদাবাজি ছাড়া আর কিছু না।’
সংবাদকর্মীকেও থামায় হাতি। সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া স্থানীয় সাংবাদিক সালেক হোসেন রনি বলেন, ‘মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ করে রাস্তার মাঝখানে হাতি দাঁড় করিয়ে চাঁদা তোলা হচ্ছে। এতে সড়কে যানজট লাগছে এবং সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দরকার।’
তবে হাতির মাহুত আরিফুল ইসলাম চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সার্কাস বন্ধ থাকায় হাতি লালন-পালনের খরচ তুলতে মানুষদের কাছে ১০-২০ টাকা করে চাই। কেউ না দিলে জোর করি না।’
কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম-এর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২ জুলাই কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নগুয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হাতির আক্রমণে ওষুধ ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান গুরুতর আহত হন এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এনআই