পাবনার ঈশ্বরদীতে সাথী বেকারি নামে একটি কারখানায় প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই চরম নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের খাদ্যপণ্য। এসব খাদ্যপণ্য (কেক, পাউরুটি, বিস্কুট) উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে মানবশরীরের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশ্রিত রং এবং ক্রিম।
উৎপাদিত এসব খাবার সংরক্ষণেও রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। এতে রয়ে যাচ্ছে ব্যাপক মানব স্বাস্থঝুঁকি। এদিকে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের কারখানা স্থাপন ও সেই কারখানার বিকট শব্দ ও কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। অভিযোগ রয়েছে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে কারখানাটি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঈশ্বরদী পৌর শহরের পূর্বটেংরি জিগাতলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নোংরা পরিবেশ, মেঝেতে ছড়ানো ময়লা জ্বালানি কাঠ-খড়ি, পুরনো পোড়া তেল ও পামওয়েল তেলের ড্রাম। এছাড়া পচেঁ যাওয়া কাঁচামালও রাখা হয়েছে কারখানার ভেতরে।
পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানারও কোনো বালাই দেখা যায় নি। খোলা হাতে, শরীরে কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই বানানো হচ্ছে এসব খাদ্যপণ্য। তৈরি করা খাবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে রয়েছে খোলা জায়গায়। ।
আইন অনুযায়ী, একটি বেকারি কারখানা চালাতে বিএসটিআই অনুমোদন, সেনেটারি লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। অথচ সাথী বেকারী নামে এ কারখানাটির কোন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, এমনকি সেনেটারি লাইসেন্সও নেই। বিএসটিআই অনুমোদন ও ট্রেড লাইসেন্স থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরেই মেয়াদোত্তীর্ন।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ‘জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন কারখানা চালানো আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়াও কারখানার বিকট শব্দ ও কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। নোংরা পরিবেশে তৈরিকৃত এসব খাবার শিশুরা খেয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।’;
নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে কারখানার দায়িত্বে থাকা মোঃ রোহান বলেন, ‘যেখানে খাবার তৈরি হচ্ছে সেখানে কোন নোংরা পরিবেশ নেই। আর বস্তায় ভরে রাখা পঁচা জিনিসপত্র মাছের খাদ্য হিসেবে রাখা হয়েছে। বস্তাগুলোতো গেটের সামনে রাখা হয়েছে তাতে খাবার তৈরিতে কোন সমস্যা হচ্ছে না।’
খালি শরীরে কারখানায় কাজ করছিলেন শ্রমিক মোঃ বিশাল। তিনি বলেন, ‘প্রচুর গরমের কারনে আজকে কাজ বন্ধ তাই টুকটাক কাজগুলো খালি শরীরেই করছি। আর সবকিছু পরিষ্কারই আছে শুধু খাবার তৈরির চুলার কাছে কিছু ছাই পড়ে আছে তা কিছুক্ষণ পরই তুলে ফেলে দিব।’
এসব ব্যাপারে সাথী বেকারি নামে ওই কারখানার স্বত্বাধিকারী মোঃ শরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘খুব একটা নোংরা পরিবেশ নেই কারখানার ভিতরে। আর নষ্ট খাবারগুলো বস্তায় ভরে এক কোনায় রাখা আছে। সেগুলো কারখানার ভিতরে রাখার নিয়ম আছে কি না তা আমার জানা নেই। আমাদের কিছু নিয়মকানুন শিখিয়ে দিতে হবে।’
বিএসটিআই এর অনুমোদন মেয়াদোত্তীর্ন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া এ কারখানা কিভাবে চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয় তা আমার জানা ছিলনা। বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স নবায়ন ও পরিবেশের ছাড়পত্র খুব শিগগিরই ঠিক করে নিব।’
পাবনা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল গফুর বলেন, ‘এ ধরনের বেকারি কারখানা স্থাপনে অন্যান্য লাইসেন্স করার আগে সর্বপ্রথম আমাদের থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে হবে। পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া এ ধরনের বেকারি প্রতিষ্ঠান হরহামেশাই চালানোর কোন নিয়ম নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পাবনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনি বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি কোনভাবেই উচিত না। এমন অনেক রকমের বেকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ম না মেনে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত এসব ব্যাপারে অভিযান চালিয়ে থাকি।’
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই, তবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসএম