মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য সরকার বছরে ব্যয় করছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা! অথচ সেই মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ১৬ জন। অভিযোগ উঠেছে, কমিটি, শিক্ষক ও স্থানীয়দের দ্বন্দ্বের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এমন চিত্র দেখা গেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার উত্তর কালামপুর হাতেমিয়া দাখিল মাদ্রাসায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাদ্রাসার চারটি শ্রেণিকক্ষে মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। এর মধ্যে দশম শ্রেণিতে ২ জন, নবম শ্রেণিতে ২ জন এবং অন্য দুই ক্লাসে ১১ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। নৈশপ্রহরী আব্দুল জলিলকে দেখা গেছে শিক্ষকদের চেয়ারে বসে থাকতে, অথচ ভারপ্রাপ্ত সুপার কামরুজ্জামান কবির সেদিন মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে চলছে। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি ও শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব এবং কমিটির অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীহীন হয়ে পড়েছে।
গত বছর এই মাদ্রাসা থেকে ৩৭ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাস করেছে মাত্র ৭ জন। আগামী ২০২৬ সালের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ৩৬ জন শিক্ষার্থীর থাকলেও বর্তমানে উপস্থিতি মাত্র ২ জন। ইবতেদায়ী শাখাতেও শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। কাগজে কলমে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে উপস্থিত মাত্র ১৫ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, “২০-২৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী কখনোই ক্লাসে উপস্থিত থাকে।” তারা আরও অভিযোগ করেন, সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম খলিল তার ভাই আব্দুল জলিলকে নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ দিয়ে প্রভাব খাটাচ্ছেন। তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং প্রায়ই শিক্ষকদের চেয়ারে বসে থাকেন।
মাদ্রাসার সাবেক সুপার মাওলানা আব্দুল হাই অভিযোগ করে বলেন, ভারপ্রাপ্ত সুপার কামরুজ্জামান কবির ভুয়া নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মাসে দুই-একবার এসে হাজিরা খাতায় সই দিয়ে ঢাকায় চলে যান।
তবে ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. কামরুজ্জামান কবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি দাফতরিক কাজে ঢাকায় আছি। বর্ষার মৌসুমে শিক্ষার্থী কিছুটা কম আসে। তাছাড়া এলাকায় পরপর তিনটি মাদ্রাসা থাকায় শিক্ষার্থী ভাগ হয়ে গেছে।’
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াদ হাসান বলেন, ‘মাদ্রাসার অনিয়মের বিষয়ে আমরা জেনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘১৫ জন শিক্ষার্থী দিয়ে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এনআই