খাবার শেষ করেই অনেক ধূমপায়ী যেন একটিবার সিগারেট ধরানোর জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। যেন খাওয়ার পর ধোঁয়ার টান ছাড়া দিনটা অপূর্ণ! এই অভ্যাস শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বজুড়েই দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এটি কেবল সামাজিক বা মানসিক অভ্যাস নয়, বরং শরীর ও মস্তিষ্কের জটিল রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফল।
চিকিৎসকদের মতে, খাবার খাওয়ার পর ধূমপান শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যদিও অনেক ধূমপায়ী মনে করেন, এতে হজমে সহায়তা হয় বা শরীর হালকা লাগে, আসলে এর বিপরীতে ঘটে ভয়াবহ ক্ষতি। হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, স্নায়ুতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রে নিকোটিনের বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবারের পর ধূমপানের এই ইচ্ছা মূলত মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে হয়। নিচে ধাপে ধাপে চিকিৎসক ও গবেষকদের মতামত তুলে ধরা হলো-
যে কোনও খাওয়ার পর ধূমপানের অভ্যাস সারা বিশ্বেই দেখা যায়
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ধূমপান করলে হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। খাবার পর ধূমপানের ইচ্ছা নিয়ে করা গবেষণাতেও একই তথ্য পাওয়া গেছে।
শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক কারণেই এই অভ্যাস
খাবারের পর ধূমপানের প্রবণতা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও সামাজিক প্রভাবেও গড়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি একধরনের আসক্তিতে পরিণত হয়।
মস্তিষ্কে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার কারণে ধূমপানের ইচ্ছা জাগে
ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) জানিয়েছে, ধূমপানের নেশা থাকলে মস্তিষ্কে এক বিশেষ রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটে। কিছু সময় ধূমপান না করলে ধূমপায়ীরা অস্থির হয়ে পড়েন, উদ্বেগ অনুভব করেন।
সিগারেটের নিকোটিনই মূল কারণ
চিকিৎসকদের মতে, সিগারেটের প্রধান উপাদান নিকোটিন মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। নিয়মিত ধূমপান করলে মস্তিষ্ক নিকোটিনের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, ফলে দীর্ঘক্ষণ ধূমপান না করলে বিরক্তি বা উদ্বেগ বাড়ে।
নিয়মিত ধূমপান মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বদলে দেয়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) জানিয়েছে, নিকোটিন মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালি পরিবর্তন করে। ধূমপান করলে সাময়িকভাবে মন শান্ত হয়, কিন্তু না করলেই অস্থিরতা বাড়ে।
খাবারের পর ধূমপানের অভ্যাস মারাত্মক ক্ষতিকর
চিকিৎসকদের মতে, বিশেষ করে ভারী খাবারের পর ধূমপান করলে শরীরে নিকোটিন দ্রুত শোষিত হয়, যা ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ধূমপান ধীরে ধীরে প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে যায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক ধূমপায়ী সকাল, খাবারের পর কিংবা কাজের ফাঁকে ধূমপান করেন। এতে অভ্যাসটি প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে মিশে যায়, যা ত্যাগ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
অভ্যাস বদলাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
চিকিৎসকদের পরামর্শ, ধূমপানের অভ্যাস দূর করতে হলে পেশাদার চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া উচিত। নিজে থেকে হঠাৎ বন্ধ করলে মানসিক চাপ বা শারীরিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
এসকে/আরআই