কুমিল্লার দাউদকান্দিতে পূর্ব শত্রুতার জেরে সংঘটিত হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে তা বিক্ষোভ মিছিলে রূপ নেয়।
মানববন্ধনে মোহাম্মদপুর গ্রামের সকল নারী ও পুরুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, খেলাধুলার মাঠে পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড নিয়ে কিশোর ও যুবকদের ওপর যে বর্বর হামলা চালানো হয়েছে, তা সমাজের জন্য ভয়ংকর দৃষ্টান্ত। এই হামলা শুধু কয়েকজন তরুণের ওপর নয়, পুরো এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর আঘাত। আমরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।
বক্তারা আরও বলেন, এই ঘটনায় অন্তত নয়জন কিশোর ও যুবক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কাজল নামের এক কিশোর গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। এমন মর্মান্তিক ঘটনার পরও যদি অভিযুক্তরা ধরা না পড়ে, তবে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়বে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, হামলায় গুরুতর আহত হওয়া কাজলের বোন মোসা. রিয়া, তার ফুফু রোকসানা আকতার, কাজলের চাচি সাবিনা আকতার ও আকলিমা আকতার, আহত খলিল মিয়ার ছেলে হাবিব, মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম মিয়াসহ আরও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। পরে মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলে গ্রামের সকল নারী ও পুরুষ অংশ নেন এবং তারা হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ ঘটনায় এর আগে দাউদকান্দি মডেল থানায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৬ নভেম্বর বিকেলে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর এলাকায় পূর্ব শত্রুতা ও ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দেওয়া হলে উভয় পক্ষ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যায়। তবে ওই ঘটনার জের ধরে প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে হামলার প্রস্তুতি নেয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, পরদিন ২৭ নভেম্বর বিকেল আনুমানিক চারটার দিকে ওই এলাকার চৌমুহনীতে মালেক হাজীর বালুর মাঠে ব্যাডমিন্টন কোর্ট প্রস্তুতের সময় সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা ধারালো দা, রামদা, লোহার রড, গ্যাস পাইপ, লাঠি ও কাঠের কয়া নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
লিখিত অভিযোগে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন আলম চৌধুরীর ছেলে হান্নান, মৃত গণি চৌধুরীর ছেলে মনির হোসেন, মৃত চারু চৌধুরীর ছেলে জামাল, আনোয়ার চৌধুরীর ছেলে মান্নান, মৃত মোস্তাক চৌধুরীর ছেলে জিলানী, মালেক চৌধুরীর ছেলে জয় মিয়া, হোসেন চৌধুরীর ছেলে রজ্জব, মৃত ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মোসলেম চৌধুরী, মৃত রৌশন চৌধুরীর ছেলে রবি উল্লা, মৃত রফিক চৌধুরীর ছেলে দিদার, রব চৌধুরীর ছেলে ইসমাইল, মৃত আবু চৌধুরীর ছেলে ছফিউল্লা এবং খালেক চৌধুরীর ছেলে আলমগীর। অভিযোগে বলা হয়, তারা সবাই দাউদকান্দি উপজেলার কালাসোনা এলাকার সরাজখোলা চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা। এদের সঙ্গে আরও আট থেকে দশজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি হামলায় অংশ নেয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত মোসলেম চৌধুরীর নির্দেশে অভিযুক্তরা একযোগে শাওন ভূইয়াসহ উপস্থিত তরুণদের ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করে। হামলার এক পর্যায়ে রবি উল্লা কাজলের মাথায় একের পর এক আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও বমি শুরু হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। বর্তমানে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ এম আবদুল হালিম মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এনআই