চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) মনছুর আলমের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যাংক লেনদেনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ধরা পড়ার পর থেকে তিনি লাপাত্তা রয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, তিনি হাটবাজার তহবিল ও বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন এবং একাধিক ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অনুমোদন উপেক্ষা করে বেআইনি লেনদেন করেছেন।
এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ ও প্রমাণাদি সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম বরাবরে পাঠিয়েছেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন হাটবাজার তহবিলের একটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভ্যাট বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আয়কর বাবদ ৬০ হাজার টাকা—মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা সরকারি কোডে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা না করে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে পুবালী ব্যাংক, শান্তিরহাট শাখায় একটি ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে পুবালী ব্যাংক, কেরানীহাট শাখা থেকে উক্ত চেকের টাকা ছাড় করার অনুমতি চাইলে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। অভিযোগপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কাগজপত্র ও চেকের কপি সংযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের আওতায় বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের জন্য প্রথম কিস্তির ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬০০ টাকা এবং দ্বিতীয় কিস্তির একই পরিমাণ অর্থ বাজেট ও প্রকল্প অনুমোদন সভা (বিজিসিসি) থেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের কাজও বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু সরকারি বিধি অনুযায়ী এসব প্রকল্পের অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমোদন গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। অথচ অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই সোনালী ব্যাংক, কোর্টহিল শাখা থেকে উক্ত দুই কিস্তির সম্পূর্ণ অর্থ উত্তোলন করেন।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক, সাতকানিয়া শাখার ব্যবস্থাপক লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে শুধু অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তার নয়, বরং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিশেষ করে সোনালী ব্যাংক, সাতকানিয়া শাখা ও কোর্টহিল শাখার ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে টাকা উত্তোলনে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ কারণে বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি টাকা উত্তোলনের প্রচেষ্টা, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ এবং এসব কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা—সোনালী ব্যাংক, সাতকানিয়া ও কোর্টহিল শাখার ব্যবস্থাপকসহ অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনছুর আলমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, মনছুর আলম পূর্বে পটিয়া উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত থাকাকালে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমনকি বর্তমানে বাজালিয়ায় দায়িত্ব পালন করলেও তিনি বড়লিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব যথাযথভাবে হস্তান্তর করেননি।
এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে সরকারি তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর থেকে অভিযুক্ত ইউপি সচিব মনছুর আলম লাপাত্তা রয়েছেন। হাটবাজার তহবিল এবং বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের কয়েক লাখ টাকা ভুয়া স্বাক্ষর ব্যবহার করে উত্তোলনের চেষ্টার বিষয়টি ধরা পড়ার পর থেকে তিনি অফিসে আর উপস্থিত হননি এবং উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন না।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনছুর আলমের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, “সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। অভিযোগগুলো গুরুতর এবং প্রাথমিকভাবে প্রমাণসাপেক্ষ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে শোকজ করা হয়েছে।”
এনআই