কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রায় ৩শ বছরে ঐতিহ্যবাহী নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ীর প্রাঙ্গণে দোল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দুই দিন ব্যাপী মেলার প্রথমদিন মঙ্গলবার (২৬ মার্চ)০ সকাল ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলাটি চলে। এর পর দ্বিতীয় বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নাওডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়ী মেলার সমাপ্তী ঘটে।
প্রতি বছর দোল পূর্ণিমায় ঐতিহ্যবাহী নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ীর প্রাঙ্গণে বি¯তৃর্ন ফাকা মাঠে দোলের মেলায় দুর-দুরান্তর থেকে হাজার হাজার দর্শনাথীর ঢলে মূখরিত মেলা প্রাঙ্গণ। দোলযাত্রায় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আবিরভাব ঘটে। দোল উৎসবে শ্রী কৃষ্ণ ভগবান তার সখা সখিদের নিয়ে দোলায় চড়ে আনন্দ উৎসব করে। বাংলা ১৩০৪ সনে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর তারা সব কিছু ছেড়ে চলে যান ভারতের কোচবিহার জেলায়। বর্তমানে তারা কোচবিহারে স্থায়ী ভাবে বসবাস করলেও। তবে প্রতি বছরে জমিদারবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী দোল উৎসবটি পালন করে আসছে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
প্রতিবারের মতো এবারো এ দোল মেলায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৫ থেকে ৪০টি দোল সওয়ারীরা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে দোল মূর্তি সিংহাসনে নিয়ে ঘারে করে জমিদারবাড়ীর দোলের মেলায় অংশ গ্রহণ করে গভীর পর্যন্ত আনন্দ উৎসব পালন করে। পূর্ণিমা বর্ণি উৎসব বা গৌরাঙ্গ মহা প্রভুর আবির ভাবের মধ্য দিয়ে তিন দিন ব্যাপী এই দোল উৎসব পালিত হয়।
সোমবার ঘর পূজা শেষে ভক্তরা প্রতিটি মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে দোল মূর্তি ও ভগবান শ্রী কৃষ্ণের চরণে পূজা অর্চনা ও অঞ্জলী দিয়ে শয়ন ভগবানের কাছে ভক্তরা ধাবিত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে আবারও পূজা অর্চনা করে দুপুরে দোল সওয়ারীরা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে দোল মূর্তি সিংহাসনে নিয়ে ঘাঁরে করে পাড়ার বিভিন্ন বাড়ীতে নিমন্ত্রণ পালন ও ভক্তের মনের বাসনা পালন শেষে বিকালে ঐতিহ্যবাহী নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ীর দোলের মেলায় অংশ নিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎসব চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত । অন্যদিকে উপজেলার নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ীর দোল মেলার মতো একই ভাবে উৎসব পালন করা হয় উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাবাইটারী দোলের পাঠ ও রাবাইটারী বসুনিয়াপাড়া দোলের পাঠ প্রাঙ্গণে।
পূঁজারী বীরেন্দ্র নাথ বর্ম্মন ও সৌরেন্দ্র নাথ গোস্মামী জানান, উপজেলার বেশির ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দোল উৎসব হিসাবে সোমবার দিনব্যাপী উপবাস থেকে ভক্তরা শ্রী কৃষ্ণের চরণে ধাবিত হয়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোল সওয়ারীরা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে দোল মূর্তি সিংহাসনে নিয়ে দোলের মেলায় ব্যাপক আনন্দ উৎসব মূখর পরিবেশে মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ীর মেলা কমিটির সভাপতি সুশীল কুমার রায় ও সাধারণ সম্পাদক রতন চন্দ্র রায় জানান, দোল উৎসব আমাদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব। তাই প্রতি বছরেই নাওডাঙ্গা জমিদার বাহাদুর শ্রীযুক্ত বাবু প্রমদা রঞ্জন বক্সীর বাড়ীর উঠানে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দোল উৎসবটি পালন করে আসছি। এই দোল উৎসবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিপুর্ণভাবে দোল মেলায় আনন্দ উৎসব করেছে। মেলায় পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ও কমিটির আমন্ত্রণে ফুলবাড়ী থানার পুলিশ মেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সব ধরণের সহযোগিতা করেছেন। তাই প্রশাসনের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ জানান, ঐতিহ্যবাহী নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ীর প্রাঙ্গণে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শান্তিপূর্ণভাবে দোল উৎসবটি পালন করেছে।
তিনি আরও জানান, পুলিশ সুপার স্যারের নিদের্শে এ উপজেলায় নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ীর দোলের মেলাসহ পৃথক তিনটি দোল মেলায় থানা পুলিশের অতিরিক্ত টহলের পাশাপাশি ও গ্রাম পুলিশও কাজ করেছেন। অত্যান্ত সুন্দর ভাবে দোল উৎসব পালনের লক্ষ্যে তিনি প্রতিটি মেলায় নিজেই উপস্থিত থেকে সবার সহযোগীতায় মেলাটি সুসম্পূর্ণ করেছেন।
এআই