এইমাত্র
  • রাত ৮টার পর শপিং মল বন্ধের নির্দেশনা
  • মালিতে রুটি-দুধের চেয়ে দাম বেশি বরফের
  • কক্সবাজারে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ৬
  • নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না: ইসি হাবীব
  • গরু-ছাগলে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ
  • মিয়ানমারে ৪৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড
  • অঙ্গীকারনামা দিয়ে জামিনে মুক্তি পেলেন সেই সঞ্জয় রক্ষিত
  • কেমন করে দলের নির্দেশ অমান্য করছেন তা আমার বোধগম্য নয়: ইসি হাবিব
  • স্কুল-মাদরাসা বন্ধে হাইকোর্টের রায় নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী
  • স্থায়ী জামিন পেলেন সেই মুশতাক
  • আজ সোমবার, ১৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    বিস্ফোরণে নিহত বাবা-মা, ঈদেও কান্না থামেনি শিশু সাজিদের

    উজ্জ্বল অধিকারী, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫১ পিএম
    উজ্জ্বল অধিকারী, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫১ পিএম

    বিস্ফোরণে নিহত বাবা-মা, ঈদেও কান্না থামেনি শিশু সাজিদের

    উজ্জ্বল অধিকারী, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫১ পিএম

    ঈদে বাবা নতুন জামা আনবে। মা আনবে খেলনা। বাবা আর মায়ের আসার অপেক্ষায় শিশু সাজিদ (৩) পথ চেয়ে বসে আসে। ছোট অবুঝ সাজিদের বুক ভরা আশা বাধলেও ভাগ্যেও নির্মমতা এইযে ঢাকায় সিলিন্ডার গ্যাস বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে তার বাবা মহিদুল খা ও মা নার্গিস খাতুন। ছোট শিশুটি এখনো বাড়ির অঙ্গিনায় গাড়ির শব্দ পেলে ছুটে চলে, এই বুঝি এলো তার মা বাবা। কিন্তু সত্যি এই যে তার তার চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

    শিশু সাজিদ সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বেড়াকোল গ্রামের খা পাড়ায় ভাঙা ঘরে জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় দাদী সাহানা খাতুনের সংসারেই থাকে। তার বাবা মা ঢাকায় গার্মেন্টসে পোষাক শ্রমিকের কাজ করতেন। সাজিদের দাদা বৃদ্ধ সাবেদ খা ছেলের উপার্জনের টাকাতেই নাতীকে নিয়ে সংসার চালাতেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মানুষটি কর্ম ক্ষমতা হারিয়েছে অনেক আগেই। বৃদ্ধি বয়সে নিজের সংসার আর নাতিকে পালার জন্য আবারো নতুন করে কাজ শুরু করেছেন। অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে এখন সংসার চালাচ্ছেন। গত তিন বছর ধরে সংসারে হাল ধরে ছিলো ছেলে মাহিদুল ও তার ছেলের স্ত্রী নার্গিস।

    সরেজমিনে, শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়ন গিয়ে দেখা যায় বিস্ফোরণ দূর্ঘটনায় এ এলাকার ৫ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের সকলের পারিবারিক অর্থনৈতিক ভাবে অসচ্ছল। এই এলাকার খা পাড়ায় দেখা হয় সাজিদের সাথে। দেখাযায় টিনের একটি ঘরে দাদা দাদীর সাথে সাজিদ। ঘরের চাল থাকলেও নেই জানালা। ঘরে আসবাবপত্র বলতে একটি মাত্র চকি। দাদীর কোলে মন ভার করে আছে সাজিদ। সাজিদের দাদা কাজের খোজে অবদার পারে গিয়েছে। বৃদ্ধ দাদী চোখে অশ্রু সিক্ত হয়ে দরজার কোনায় সাজিদকে কোলে নিয়ে বসে আছেন।

    কথা হয় দাদী সাহানা খাতুনের সাথে তিনি জানান, নাতী বারবার শুধু বাবা-মার কথা বলে। ও বলে ঈদে বাবা আসবে আমার জন্য মাংস নিয়ে আসবে মা আমার জন্য খেলনা আনবে আরো কত কি। আমি তখন মুখ লুকিয়ে কাঁদি, ছোট ছেলেটি তাই দেখে আমার থেকে দূরে গিয়ে মন ভার করে বসে থাকে। প্রতিবেশী অনেক ছোট ছেলেমেয়েরা সাজিদকে বলে তোর বাবা মা মারা গেছে। এ কথা শুনে দৈড়ে আমার কাছে আসে আর কান্না ভরা কন্ঠে বলে আমার বাবা মা কোথায়? ছোট এই অবুঝ শিশুকে নিয়ে আমি কি করবো। আমার দুই সন্তানের মধ্যে মহিদুর ছোট। বড়জন নিজের সংসার নিয়েই থাকেন আমাদের দেখে না। গত তিন বছর ধরে ছোট ছেলেই আমাদের লালন পালন করছে। এখন সংসার চালাতে বৃদ্ধ মানুষটি আবারো মাঠে ঘাটে ছুটছে।

    এখানে কথা হয় সাজিদের প্রতিবেদী আর এক দাদা রমজান খা সাথে তিনি বলেন, এই পরিবার খুবই অসচ্ছল, ছেলের মৃত্যুর পর নাতিকে নিয়ে কোনমতে দিন পার করছে। ঈদের আনন্দ আর কি, ঠিক মত ইফতারি করতে পারেন না। গতকাল পানি দিয়ে ইফতারি করেছেন।

    সাজিদের দাদা সাবেদ খা জানান, ছেলে ও ছেলের বউ মৃত্যুর পর কোন সহযোগিতা পায়নি। গতকাল একটা দলের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি। সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা আসেনি। সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়াতো তাহলে নাতিকে নিয়ে এই বয়সে অন্তত ঠিকমতো বেঁচে থাকতে পারতাম।

    শুধু মহিদুল ও নার্গিসের পরিবারের অবস্থাই এমন নয়, একই গ্রামের হলদার হালদারপাড়া গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটনায় নিহত সোলায়মান মোল্লার পারিবারিক অবস্থা একই। সুলাইমানের স্ত্রী শাপলা খাতুনের দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সংসার। স্বামীর মৃত্যুর পর একটি ছোট ঘরে তিন সন্তান আর শাশুড়ি সুকজান খাতুনকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। তার স্বামী সোলাইমান তার ছোট ভাই উজ্জ্বল মোল্লার স্ত্রী শিল্পী খাতুন ও তার দুই সন্তান নিরব ও নূরনবী কে বাঁচাতে গিয়ে দুর্ঘটনার নিহত হয়। শিল্পী খাতুন ও নিরব এখনো ঢাকা বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। পায়ে পোড়ার ক্ষত নিয়ে নূরনবী শাপলা খাতুন এর কাছে রয়েছেন।

    শাপলা খাতুন জানান, তার স্বামী একজন প্রতিবন্ধী। ঠিকমতো হাঁটতে পারতেন না তিনি। ঢাকায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। আমি অন্যের বাসায় কাজ করতাম। ঘটনার দিন ভাইয়ের বউকে বাঁচাতে গিয়ে তার শরীরে আগুন লেগে যায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আমি এখন আমার তিন সন্তানকে নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছি। তিনি জানান, ঘটনার পরে ৭৫০০ টাকা সহায়তা পেয়েছিলাম। আর একটি দল থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। ২২ বছর সংসার করেই আমি আমার স্বামীকে হারালাম। পিতৃহারা হলো আমার তিন সন্তান। এখন আমি তাদেরকে নিয়ে কি করব কিভাবে চলবো?

    এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সোলায়মানের মা সুখজান বেগম। কান্না ভরা কন্ঠে বারবার তিনি তার ছেলেকে ফেরত যাচ্ছেন। নানান আকুতি করে শুধু একটি কথাই বলছেন আমার ছেলের মৃত্যুর পর তাকে আর চেনা যায়নি। পুরো শরীর আগুনে পুরে নষ্ট হয়ে গেছে।

    একই এলাকার বাবা মা হারা কুটি ফকিরের ঘরে এখন তালা চলছে। স্ত্রী দুলু খাতুন আর তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার ছিল তার। বাবা আয়নাল ফকির ও মা জরিনা খাতুন অনেক আগেই মারা গেছেন। ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি। দুলু খাতুন কাজ করেন স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসে। স্বামীর মৃত্যুর পর এলাকায় এসেছিলেন একবার। পেটের দায়ে তিন সন্তানকে নিয়ে আবারো ঢাকাতে অবস্থান করছেন তিনি। দুলু খাতুনের বড় মেয়ে রুমি খাতুন (১৩) অল্প বয়সেই বিয়ে হয় তার। মেঝে মেয়ে ফাতেমা (৭) আর ছোট মেয়ে জান্নাতি(৪)।

    কুটি ফকিরে চাচাতো ভাই সেদেক ফকির বলেন, আমার চাচাতো ভাই দিন এনে দিন খেতো। পেটের দায়ে ঢাকায় কাজ করতেন। তিনি মরে গেছেন কিন্তু রেখে গেছেন তিন সন্তানকে। জানিনা তাদের ভাগ্যে কি হবে? আমরাও কোনমতে দিন পার করি। তাই ইচ্ছা থাকলেও তাদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না। সরকার যদি তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে অন্তত তারা বেঁচে খেয়ে থাকতে পারতো।

    শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, নিহতদের তালিকা অনুসারে তাদের সহায়তা করা হবে। এ বিষয়ে কার্যক্রম চালু রয়েছে। গ্যাস বিস্ফোরণ দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ জনের মধ্যে সিরাজগঞ্জেই রয়েছে ৬ জন। অসহায় এ মানুষগুলোর পাশে সরকার এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সকলে।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…