ঘুরতে সবাই পছন্দ করে। ঘুরতে পছন্দ করে না এমন খুব কমই আছে। আর ঈদ এলে তো কথাই নেই, নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে অনেকের পরিকল্পনার শেষ নেই। এই পরিকল্পনা যদি কোলাহল মুক্ত সবুজ ঘেরা কোন প্রকৃতি, নদী কিংবা স্নিগ্ধ বালুময় সমুদ্রের তীরে অবকাশ যাপনের জন্য না করা যায় তাহলে যেন তৃপ্তি নেই। এবার তেমনি দুটি স্থান শুভসন্ধ্যা ও সুরঞ্জনা ভ্রমনের পরিকল্পনা করা যাক।
হরিণঘাটা ইকোপার্ক:
বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষে একটি সুন্দর বনভূমি হরিণঘাটা ইকোপার্ক। সকল দিকে বিস্তীর্ণ সাগরের হাতছানি আর অন্যদিকে অকৃত্রিম বনের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সবুজের সমারোহ যাদের মুগ্ধ করে তাদের জন্য এই দেশের মাঝেই বেড়ানোর চমৎকার একটি স্থান। এখানে এসে যেমন উপভোগ করা যায় সাগরের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য, তেমনি দেখা মেলে নানা প্রজাতির গাছের সমারোহে গড়ে ওঠা সবুজ নিসর্গ আর হরেক রকম বণ্যপ্রাণীরও।
বনের ভেতর দিয়ে আঁকাবাঁকায় নির্মাণকৃত এ ফুট ট্রেইল প্রায় ২,৯৫০ মিটার দীর্ঘ। এ ফুট ট্রেইল বনের ভেতর দিয়ে সাগর মোহনায় সৃজিত ঝাউবন পর্যন্ত বিস্তৃত। দর্শনার্থীদের একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বনের ভেতর থেমে থেমে চারটি বিশ্রামাগার সদৃশ গোলঘর নির্মাণ করা আছে। দৃষ্টিনন্দন এ বনে প্রাকৃতিক কেওড়া, পশুর, গেওয়াসহ সৃজিত সুন্দরী ও ঝাউবন রয়েছে। এখানে হিংস্র প্রাণী না থাকলেও আছে হরিণ, বন মোরগ, বানর, শুকর, গুইসাপ, নানা প্রজাতির সরীসৃপসহ ২০ প্রজাতির বন্য প্রাণী। বনে আছে অন্তত ৫০ প্রজাতির পাখি আর অগণিত ফরিং ও প্রজাপতিসহ নানা প্রাণীকূল ।
শুভসন্ধ্যা
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় বরগুনা জেলার প্রধান তিনটি নদী- পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বরের জল মোহনার সাগরে মিশে যাওয়ার স্নিগ্ধ বেলাভূমির বালুচর শুভসন্ধ্যা। যার একদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন এবং অপরদিকে সীমাহীন বঙ্গোপসাগর।
সাগর ঘেঁষা নয়নাভিরাম এ সৈকতটি তালতলী উপজেলার নিশানবারিয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়া এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি নলবুনিয়া চর নামে পরিচিত। এ চরের বনাঞ্চল প্রায় ১০ কিলোমিটার। ২০০৬ সালে ৫৮ হেক্টর জমিতে এখানে নন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল গড়ে তোলে বন বিভাগ। ঝাউ গাছ, খইয়্যা বাবলা, মাউন্ট, আকাশমনি, অর্জুন, কালি বাবলা, কড়াই, খয়ের ও বাদাম সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে এখানে। বিস্তীর্ণ বেলাভূমির এই বনাঞ্চলের সাগর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সূর্যোদ্বয় ও সূর্যাস্ত দুটোই উপভোগ করা যায়।
যাতায়াত :
পর্যটকরা সাধারণত নৌ ও স্থলপথেই আসতে পারবেন। ঢাকা থেকে বিকাল ৫ টায় পাথরঘাটার কাকচিড়ার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়। এ ছাড়া গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে আসা যাবে বাসে।
বরগুনা ও পাথরঘাটা শহরে সল্প খরচে আবাসিক হোটেল, ডাক বাংলো, এনজিও রেস্ট হাউস ও হরিণঘাটা ইকোপার্কে রয়েছে বনবীথি ডাকবাংলো । একটিতে রুম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ুন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। প্রথমেই পাথরঘাটার পৌরসভার সামনে থেকে আটোরিকশা রিজার্ভ করে কিংবা মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে চলে যাবেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য হরিণঘাটা ইকোপার্কে ।
হরিণঘাটা ঘোরার পরে পর শুভসন্ধ্যায় যেতে প্রথমে তালতলীর উদ্দেশ্যে ছাড়া যানবাহন ও ট্রলারে তালতলী সদরে যাবেন। সেখান থেকে ভ্যান, রিকশা, মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে সোজা কাঙ্খিত শুভসন্ধ্যায়। ভ্রমণ শেষে তালতলী থেকেও চলে যেতে পারবেন ঢাকা। বরগুনা ও পাথরঘাটা কাছে কেউ চলে যেতে পারবেন ঢাকা।
এমআর