নেত্রকোনায় গ্রামীণ ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রত্যন্ত গ্রামে খনার মেলা আয়োজন করেছে মঙ্গল ঘর নামের একটি সংগঠন।
আজ শনিবার(১৩ এপ্রিল) বাংলা ১৪৩০ কে বিদায় জানাতে জেলার জেলার কবি সাহিত্যিকের উর্বর ভূমি ও ময়মনসিংহে গীতিকার ঐতিহ্যবাহী উপজেলা কেন্দুয়ার গড়াডোবা ইউনিয়নের আঙ্গারোয়া গ্রামে এই আয়োজন করা হয়েছে। ১৩ এপ্রিল সূর্যোদয় থেকে পরদিন ১৪ এপ্রিল সূর্যোদয় পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা ব্যাপ্তি দিন রাত চলবে এই আয়োজন।
আয়োজনে বয়াতি পালা গান, জারি গান, কেচ্ছা গান, লাঙ্গল, কোপি বাতি, বিন্দা, মাটির পাত্র, বাঁশের তৈরী বিভিন্ন তৈজসপত্র সহ গ্রামের ঐতিহ্যের সকল কিছু এখানে তুলে ধরা হয়।
তবে মেলা বলতে সাধারণ নানা ধরনের খেলনার পসরা বুঝালেও এই মেলা সেই মধ্যে মেলা নয়। এটিতে কথা, গান দিয়ে ভরিয়ে তোলা হয়েছে।
আর সেই কথায় বা গানে গানে গ্রামীণ চিরায়ত চিত্র ফুটে উঠেছে। বয়াতির নিজেদের ভাষায় পালা গানের মাধ্যমে তুলে ধরেন এই গ্রামীণ সংস্কৃতি। খনার মেলার মূল প্রতিপাদ্যই ছিলো "আলো হাওয়া বেঁধো না, রোগে ভোগে মরো না"। অর্থাৎ কৃষি উপজীব্যকে সামনে তুলে আনতেই এমন আয়োজন।
আর এই আয়োজনে গ্রামে বেড়াতে আসা বিভিন্ন বয়সের শ্রেণি পেশার মানুষও উপস্থিত থেকে ঈদ এবং বৈশাখের ছুটির আনন্দ উপভোগ করেছে। শুধু গ্রামের মানুষই নয় জেলা ছাড়াও ঢাকা কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন অনেকেই।
বিভিন্ন শিল্পীরাও পরিবেশন করেছেন স্থানীয় বাউল সাধকদের গান। এছাড়াও স্থানীয় বয়াতি পালা গান, জারি গান, কেচ্ছা গান পরিবেশন করে। সবাই মিলে গ্রামীণ খাবার খেয়েছেন মাটির পাত্রে। পুরনো আসবাবপত্র তুলে ধরা হয় নতুন প্রজন্মকে চিনিয়ে দিতে।
খনার মেলায় আসা অতিথি পাপিয়া আক্তার বলেন, এই যে গ্রামে এই সময়ে আনন্দ করছে মানুষ এটাই তো হারিয়ে গিয়েছিল। এটি আবারও জাগ্রত হলে আবার গ্রামে ফিরবে মানুষ।
গ্রাম ছাড়া শহর হয়নি। তাই গ্রামের প্রতিবেশ পরিবেশ এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলোকে এমন আয়োজনের মাধ্যমেই পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই খনার মেলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিল্পকলা ও নাট্যকলা শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা সময়ের কণ্ঠস্বর বলেন, খনাকে নিয়ে আয়োজন এটাই প্রথমবারের মতো আমরা দেখেছি। আমরা চাই প্রতিবছর আয়োজনটি বড় পরিসরে হোক এবং গ্রামের ঐতিহ্য ধরে রাখুক। আয়োজক গড়াডোবা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিপন চৌধুরী জানান, মঙ্গল ঘর নামে তাদের একটি মাত্র কক্ষ রয়েছে যেখানে প্রতিদিন আড্ডা হয়।
এসকল আড্ডায় ভালো ভালো চিন্তা বেরিয়ে আসে। আর সেখান থেকেই এই খনার মেলার আয়োজন। প্রথমবারে মতো এমন আয়োজনে স্থানীয় গ্রামের মানুষ আনন্দ নিচ্ছে এটাই অনেক বড়। বিশেষ করে খনার বচন এখন আর শোনাই যায় না। এগুলো নতুন প্রজন্ম শুনবে এবং ধারণ করবে। খনার বচনের সাথে প্রকৃতির সকল কিছু মিশে আছে।
এমআর