চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে হালদা নদীর উপর নির্মিত শতবর্ষী একটি কাঠের সাঁকো ১২ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে তৈরী জরাজীর্ণ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২২ হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। কিছুদিন পরপর সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় এলাকাবাসীর ভোগান্তির শেষ থাকে না।
উপজেলার নারায়ণহাট বাজারের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে হালদা নদী। নদীর উত্তর পাশে নারায়ণহাট বাজার এবং দক্ষিণ পাশে ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দশবারোটি গ্রামের প্রায় দশ বারো হাজার মানুষের বসবাস। সময়ের ব্যবধানে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও নদী পারাপারের জন্য এখনো তৈরি হয়নি একটি পাকা সেতু। এখানকার ১২টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা একটি কাঠের সেতু। কাঠ এবং বাঁশ দিয়ে বানানো সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হওয়া গেলেও সম্প্রতি বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে সাঁকোটি। ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি হালদা নদীর নারায়ণহাট বাজার এলাকায় একটি পাকা সেতু নির্মাণের।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদর হতে প্রায় ১৬ কি.মি. উত্তরে ৩ নম্বর নারায়ণহাট ইউনিয়নকে দ্বিখন্ডিত করেছে খরস্রোতা হালদা নদী। নদীর দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে জমিদার পাড়া, সুন্দরপুর, হাপানিয়া, রাজারটিলা, আনিচার খিল, খালাছি পাড়া, সন্দ্বীপ পাড়া সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। নারায়ণহাট ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, হাঁপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শামসুনাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এ গণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারায়ণহাট ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিস অন্যতম। নদীর উত্তর পাড়ে রয়েছে- নারায়ণহাট বাজার, নারায়ণহাট ইউনিয়ন পরিষদ, নারায়ণহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস, নারায়ণহাট ডিগ্রি কলেজ, কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহিলা মাদ্রাসা, বাস স্টেশন সহ বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। দৈনিক কয়েক হাজার মানুষ পারাপার হতে হয় এ পথে। শিক্ষার্থী, বাজারের ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হচ্ছে হালদা নদীটি। যদি অস্থায়ী সাকুটি ভেঙে যায় নির্ভর করতে হয় নৌকার উপর।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষার্থী জান্নাতুল আফরিন বৃষ্টি বলেন, রাতে ঘুমানোর সময় চিন্তা থাকে সকালে কীভাবে একা-একা সেতুটি পার হবো, ভয় কাজ করে যদি নিচে পড়ে যায়! আমাদের দুঃখ দেখার যেন কেউ নেই? যিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ভয়হীন চলাচলের একটি সেতু উপহার দিবে।
আইনজীবী নোমান বিন খোরশেদ বলেন, আমাদের একটি আশা অন্ধকার কেটে গিয়ে যেন আলোর পথ দেখায় এই সেতু। অন্ধকারে আমরা আর চলতে পারছি না, ছাত্রছাত্রীদের দূর্ভোগ নিজের চোখে না দেখলে বুঝা যাবেনা। এ কষ্ট থেকে রেহাই চাই!
নারায়ণহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলমগীর চৌধুরী বলেন, একটি সেতুর অভাবে এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর দুঃখের শেষ নেই,রয়েছে প্রতি মুহুর্তে দূর্ঘটনার ঝুঁকিও। দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষের একটি দাবী যেন সেতুটি দ্রুত নির্মাণ হয়, সেতুটি নির্মিত হলে যাতায়াতে ভোগান্তি লাঘবের পাশাপাশি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতি হবে বলেও মনে করেন সচেতন মহল।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী তন্ময় নাথ বলেন, 'নারায়ণহাট বাজারের পাশে হালদা নদীতে একটি বেইলী ব্রীজের জন্য প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। সয়েল টেস্ট পাঠানো আছে,বরাদ্দ পেলে নির্মাণ কাজ শুরু করবো।'
পিএম