হলুদের আভায় ছেয়ে আছে বিস্তৃত সূর্যমুখীর বাগান। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নজরকাড়া এক হলুদ আঙিনা। আর চোখ জুড়ানো এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিনভর এই সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছেন শত শত মানুষ। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাই কৃষকরাও ঝুঁকেছেন সূর্যমুখী চাষে।
অবসর সময়ে ও দুপুরের তপ্ত রোদের পরে সূর্যমুখী বাগান পরিণত হয় নানা বয়সী মানুষের মিলনমেলায়। সূর্যমুখী ফুলের বাগানটি এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে রূপান্তরিত হয়েছে। সূর্যমুখী চাষে দিন দিন আগ্রহও বাড়ছে কৃষকদের। তেলবীজ উৎপাদনের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে কৃষি পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাও। জনপ্রিয় এই সূর্যমুখীর বাগানে কেউ বন্ধু-বান্ধব কিংবা কেউ আসছেন পরিবার নিয়ে। কেউ শাড়ি পড়ে, কেউ বা আবার সালোয়ার কামিজ পরে তুলছেন ছবি বা সেলফি। কেউবা আবার ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাগানের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। বড়দের সাথে শিশুরাও মেতেছে সমান আনন্দে।

মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়েনের বড় আজলদী এলাকার দুই একর মাঠ জুরে সূর্যমুখী ফুলের বাগানে। কম করেছে অধিক লাভবান হওয়াই এই বাগান করতে আগ্রহী হয়েছেন কৃষকরা। আবার এই বাগানের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন শত শত প্রকৃতিপ্রেমী হাজির হন সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। শুধু স্থানীয়রাই নন, আশপাশের জেলা থেকেও আসছেন অনেকে। পিছিয়ে নেই ভিডিও তৈরি করা ব্লগার, ইউটিউবার ও টিকটকাররাও।
সরেজমিনে পাকুন্দিয়া উপজেলা চন্ডিপাশার বড় আজলদী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুই একর মাঠ জুরে সূর্যমুখী ফুলের হাসি চোখে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন সূর্য ঝলমলিয়ে হাসছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার। সূর্য যখন যেদিকে হেলছে, সূর্যমুখী ফুলও সেদিকে হেলে পড়ছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে তাতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের জমি। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে। তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা অনেক বেশি।
সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা লামিয়া মুনতাহা বলেন, সবুজের মাঠে হলুদ আর সবুজ মিশেলে অপরূপ সূর্যমুখীর এ দৃশ্য দেখে আমি অনেক মুগ্ধ। এমন এক মায়াবি দৃশ্য ফ্রেমবন্দি করতে পেরে অনেক খুশি আমি।
শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম আকাশ বলেন, সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারণ সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে।
স্থানীয় বাসিন্দা লাদেন মিয়া বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা গৃহবধূ রিতু আক্তার বলেন, শহরে এমন সূর্যমুখী বাগানের ফুল দেখা যায় না গ্রামের এই মাঠে সূর্যমুখী বাগানের ফুল দেখে খুব আনন্দিত আমরা।
ইউটিউবার মনির হোসেন জানান, ফেসবুকে দেখেছি এ বাগানে অনেকেই ছবি তুলেছে। আমিও সূর্যমুখী বাগানে ঘুরতে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে। তাই একটি ব্লগ তৈরি করার পাশাপাশি বেশ কিছু ছবি তুললাম এবং কয়েকটি ভিডিও তৈরি করলাম।
সূর্যমুখী চাষি আব্দুল মোমেন জানান, সরকারি প্রনোদনা ও প্রদশনীর মাধ্যমে বীজ ও সার পেয়ে এবছর প্রথম সুর্যমূখীর চাষ করেছেন তিনি। প্রথমে তেমন আগ্রহ না থাকলেও ফলন দেখে অনেক ভালো লাগছে। প্রতিটি গাছে অনেক বড় বড় ফুল হয়েছে। কম খরচে অধিক ফসল পাওয়া যায় ও সূর্যমুখীর তেলের চাহিদা রয়েছে এ কারণে আমরা এই ফসলটি আবাদ করেছি। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখতে ও ছবি তুলতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অনেকেই। আবহাওয়া ও বাজার ভালো থাকলে অনেক টাকা লাভ হবে।
উপজেলা চন্ডিপাশা ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম, এই এলাকার মাঠি সূযমুখী চাষের জন্য খবুই উপযোগী, যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে ও কোন প্রাকৃতিক দূযোগ না আসে তাহলে আশা করছি একরে প্রায় ৮০০-১০০০ কেজি সূর্যমুখীর বীজ সংগ্রহ করা যাবে। এ বীজ থেকে ৩৫-৪০ ভাগ তেল উৎপাদন করা যাবে। তেলের পাশাপাশি এ খৈল পাখি, মাছ ও গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে বাড়তি আয় সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-ই-আলম জানান, তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় সরকারের প্রণোদনা ও পার্টনার প্রোগ্রাম এর আওতায় এবং কৃষি বিভাগের নজরদারিতে পতিত জমিতে সূর্যমুখী ফসল আবাদ করে কৃষকের বাম্পার ফলন হয়েছে। সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেলে লিনোলিক অ্যাসিড থাকে যা হার্টের জন্য ভালো। এছাড়া এই তেল আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন বাড়লে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাবে, চাষিরাও লাভবান হবেন। কম খরচে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় এই উপজেলার অনেকেই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
এসআর