এইমাত্র
  • দেশের সব নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
  • স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ, স্ত্রী ও প্রেমিক আটক
  • রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্দে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা চান এরদোয়ান
  • ওসমান হাদির ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করছে না বিএনপি
  • ছুটির দিনেও খোলা থাকবে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়
  • ওসমান হাদির ওপর হামলার পর পানছড়ি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার
  • ১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জাবালে নূর টাওয়ারের আগুন
  • চট্টগ্রাম-১৫ আসনে বিএনপি’র প্রার্থীকে জরিমানার পর শোকজ
  • আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত ৫৭২
  • আজ রবিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    রাজশাহীতে প্রাণের পরশ: ১২ হাজার স্বপ্নের নতুন ঠিকানা

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০০ পিএম
    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০০ পিএম

    রাজশাহীতে প্রাণের পরশ: ১২ হাজার স্বপ্নের নতুন ঠিকানা

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০০ পিএম

    কয়েক বছর আগেও, রাজশাহী টেক্সটাইল মিল চত্বরে ঘুরলে চোখে পড়ত ধুলোজমা জরাজীর্ণ ভবন, নীরবতা আর এক ধরনের বিষণ্নতা। সেই নীরবতা আজ ভেঙেছে। কোলাহলে মুখরিত হয়েছে মিলের আঙিনা। বাতাসে ভাসছে নতুন স্বপ্নের সুবাস। কারণ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হাত ধরে মিলটি ফিরছে প্রাণে, ফিরছে ১২ হাজার মানুষের জীবনের নতুন সম্ভাবনা।

    রাজশাহী শহরের কলেজছাত্রী মেহজাবিন আক্তার। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শুনে এসেছেন, ঢাকায় কাজের সুযোগ বেশি, উন্নতি মানেই রাজধানীর দিকে ছুটে চলা। কিন্তু এখন তিনি আশাবাদী। প্রাণ-আরএফএলের নতুন কারখানায় কাজ পেলে রাজশাহীতেই ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

    মেহজাবিন বলেন, এখন মনে হচ্ছে, নিজের শহরে থেকেও বড় কিছু করার সুযোগ পাওয়া যাবে।

    মেহজাবিনের মতো হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর চোখে আজ এক নতুন আলোর রেখা।

    প্রায় ২৬ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠছে আধুনিক শিল্পকারখানা। পুরনো অবকাঠামো সংস্কার করে তৈরি পোশাক, ব্যাগ এবং জুতা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। ইতিমধ্যে এক হাজার শ্রমিক কাজ করছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আরও এক হাজার। দুই বছরের মধ্যে এই কারখানায় কর্মরত মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    শুধু উৎপাদনই নয়, এখানে গড়ে তোলা হবে একটি আধুনিক কল সেন্টার এবং স্কিলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, যেখানে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারবেন আন্তর্জাতিক মানে।

    আমরা ঢাকাকেন্দ্রিক শিল্পায়নের চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই, বললেন প্রাণ-আরএফএলের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল। তিনি আরও যোগ করেন, "রাজশাহীর শ্রমশক্তি ও সম্পদ কাজে লাগিয়ে আমরা স্থানীয় অর্থনীতির চাকা সচল করতে চাই।

    এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশাহীর দীর্ঘদিনের অবহেলা কাটিয়ে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক মুক্তির একটি পথ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

    প্রাণ-আরএফএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কারখানাটি হবে একটি ‘সাসটেইনেবল গ্রীন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’। সৌরশক্তির ব্যবহার, সবুজায়ন, এবং পানি পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে আধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।

    বিশ্লেষকরা অবশ্য সতর্ক করছেন, কেবলমাত্র কারখানা স্থাপনই যথেষ্ট নয়। দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলা, মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন, এবং টেকসই রপ্তানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি। রাজশাহীর প্রযুক্তি ও পরিবহন অবকাঠামো উন্নত করতে না পারলে রপ্তানির বড় লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে যেতে পারে।

    তবুও প্রাণ-আরএফএল কর্তৃপক্ষের আত্মবিশ্বাসী পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের সঠিক ব্যবস্থাপনা এই আশঙ্কাকে কাটিয়ে উঠবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

    রাজশাহীতে প্রাণ-আরএফএলের বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের সফলতার অভিজ্ঞতা নতুন প্রকল্পকে আরও দৃঢ়তা দিয়েছে। বর্তমানে যেখানে ১২০০ জন কর্মরত, সেখানে নতুন কারখানায় কর্মসংস্থান বাড়লে এই অঞ্চলের সামাজিক-অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যেতে বেশি সময় লাগবে না।

    রাজশাহী শহরের প্রবীণ ব্যবসায়ী হানিফ মোল্লা বললেন, "ছোটবেলায় দেখেছি, এই টেক্সটাইল মিল কত মানুষের জীবিকা ছিল। এখন আবার যদি তা ফিরে আসে, তাহলে রাজশাহীর দিন ফিরবে।"

    রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের পুনর্জাগরণ শুধু একটি কারখানা চালুর গল্প নয়। এটি উত্তরবঙ্গের মানুষের আশা-ভরসার গল্প। এটি একটি অঞ্চলের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার গল্প। দেশ যখন সমন্বিত উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সমতার পথে এগোতে চায়, প্রাণ-আরএফএলের রাজশাহী প্রকল্প সেখানে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে। রাজশাহীর নীরব আকাশে এখন বয়ে চলেছে নতুন প্রাণের হাওয়া কর্মসংস্থান, উন্নয়ন আর স্বপ্নের অদম্য আহ্বান নিয়ে।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…