এইমাত্র
  • ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার আপডেট জানালো ইনকিলাব মঞ্চ
  • জীবনের নিরাপত্তা চান জাকির খান, থানায় জিডি
  • দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
  • যুগ্ম সচিবকে জিম্মি করে চাঁদা দাবি চালকের!
  • ভারতের হাইকমিশনারকে লাথি দিয়ে বের করে দেয়া উচিত: হাসনাত আব্দুল্লাহ
  • ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সৌদি আরব
  • ভিক্ষাবৃত্তির দায়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে ৫১ হাজারের বেশি পাকিস্তানিকে
  • পে-স্কেল নিয়ে অবশেষে যেসব সিদ্ধান্ত হলো
  • মেক্সিকোর সংসদে নজিরবিহীন হট্টগোল, চুলোচুলিতে জড়ালেন আইনপ্রণেতারা
  • কলকাতার নিউটাউনে ঘুনি বস্তিতে ভয়াবহ আগুন
  • আজ বৃহস্পতিবার, ৩ পৌষ, ১৪৩২ | ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
    আন্তর্জাতিক

    শুধু পারমাণবিক নয়, আরেক ভয়াবহ সংকটের মুখে ভারত-পাকিস্তান

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩১ পিএম
    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩১ পিএম

    শুধু পারমাণবিক নয়, আরেক ভয়াবহ সংকটের মুখে ভারত-পাকিস্তান

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩১ পিএম

    ভারত ও পাকিস্তান যখন আবারও তাদের চিরচেনা 'যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায়' জড়াতে চলেছে - যা এইবার আগের যেকোনো বারের চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন -তখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক নোয়াম চমস্কির ১২ বছর আগের কথাগুলো নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে।

    ২০১৩ সালে তার বই নিউক্লিয়ার ওয়ার অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল ক্যাটাসট্রফি' তে চমস্কি সতর্ক করে বলেন, 'মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য দুটি প্রধান হুমকি রয়েছে-একটি পারমাণবিক যুদ্ধ, আরেকটি পরিবেশগত বিপর্যয়।

    পারমাণবিক হুমকির বিষয়টি আমাদের অনেকেরই জানা, কিন্তু পরিবেশগত বিপর্যয়ের বিষয়টি ততটা অনুধাবন করা হয় না। অথচ এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এখানে নদীগুলো শহরায়ন, বড় বাঁধ দিয়ে প্রবাহ আটকে রাখা এবং পর্বতের তুষার গলনের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম চাপে পড়েছে। ভারত ও পাকিস্তান-উভয় দেশই এখন বন্যা ও খরা উভয় সংকটে ভুগছে। এর মাঝে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন এবং ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ দুই দেশকেই মৃত্যুফাঁদে ফেলতে পারে।

    কাশ্মীর, যা কেবল দুটি নয়, তিনটি দেশের দাবির কেন্দ্রবিন্দু, সেখানে প্রায় প্রতি বছর ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে-এবছরও আশঙ্কা রয়েছে। পেহেলগামের করুণ ঘটনা অবশ্যই হৃদয়বিদারক, কিন্তু এর প্রতিকার যুদ্ধের দামামা, পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার ও ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়ানো মোটেও ভালো কিছু হবে না।

    বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের আশঙ্কা ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে, যেখানে দুই পক্ষই একে অপরের ভয়াবহ ধ্বংস ঘটাতে ও পাল্টা হামলা সহ্য করতে প্রস্তুত বলে দাবি করছে।

    তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের দুর্বলতা কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অগ্রসর সামরিক শক্তি নয় - বরং দেশটির অভ্যন্তরে একটি ভয়াবহ পানিসংকটই হতে পারে বড় হুমকি। এসব তথ্য উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের দিল্লি প্রতিনিধি জাওয়েদ নকভীর লেখায়।

    যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা সফল হয়, তবে ইরানের শাসকদের সামনে অপেক্ষা করছে এক জটিল অভ্যন্তরীণ সংকট-যা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। আফগানিস্তানের সঙ্গে হেলমন্দ নদী নিয়ে বিরোধও রয়েছে। পানির অভাবে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোকজন উত্তরের প্রদেশ ও তেহরানের আশপাশে অভিবাসন করছে।

    ১৯৮০-এর দশকে এক পার্সি বংশোদ্ভূত ভারতীয় কূটনীতিক, তেহরান থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে দুবাই নিয়ে মজার এক মন্তব্য করেছিলেন-যেখানে আমি তখন একটি পত্রিকায় কাজ করছিলাম। তিনি বলেছিলেন,'তুমি এই ডেসালিনেটেড (লবণমুক্ত করা) পানির অর্থনীতিতে কী করছো?'

    আকবর খালিলির সেই আধা-রসিক মন্তব্য এসেছিল ইরানের প্রাচীন সভ্যতা ও এর আশপাশের ব্যাবিলনীয় ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে।

    সভ্যতা গড়ে ওঠে পানির চারপাশে। ইরান ও ইরাক এর আগেও শত্তুল আরব নদী নিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছে। ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে আরব দেশগুলোকে পরাজিত করে সিরিয়ার গোলান মালভূমির দখল নেয়-যেটি পানি সমৃদ্ধ এলাকা এবং তাদের কুখ্যাত ‘কোশের ওয়াইন’ রপ্তানিতে সহায়ক। আরেক মহৎ সভ্যতার উত্তরাধিকারী মিশর তার অন্যতম নদী নীলনদ নিয়ে সুদান ও ইথিওপিয়ার সঙ্গে উত্তেজনায় লিপ্ত।

    চমস্কি আরও বলেছিলেন, 'যেখানে পারমাণবিক হামলা চালানোর জন্য সক্রিয় উদ্যোগের দরকার হয়, সেখানে পরিবেশগত বিপর্যয় মূলত মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত নিষ্ক্রিয়তার মাধ্যমেই ঘটে।'

    তিনি যুক্ত করেছিলেন, 'তথ্য অস্বীকার করা হচ্ছে -এটিই শুধু নয়। এর সঙ্গে রয়েছে অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি আহরণ, কৃষিজমি ধ্বংস করে বায়োফুয়েল উৎপাদন, বাঁধ নির্মাণ এবং বন উজাড়-যা প্রকৃতিতে কার্বন সংরক্ষণের জন্য অপরিহার্য।”

    ভারত ও পাকিস্তান-উভয়ই এই দুঃসংবাদের সবগুলো বাক্সে টিক চিহ্ন দিয়ে ফেলেছে।

    পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশবিদ আইশা খান সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম এক্সে মন্তব্য করেন: যেন হিমবাহ সংকটই যথেষ্ট নয়, এখন আবার পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের হুমকি ও আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমাদের উচিত (মানবজাতির) টিকে থাকার ইস্যুগুলো একসঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে মোকাবিলা করা-নতুন সংকট তৈরি না করে।'


    তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ভারতের ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিত রাখার উদ্যোগের প্রতি, যার মাধ্যমে পাকিস্তানের অভিমুখে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি সরিয়ে নেয়ার ইঙ্গিত মিলছে।

    ভাগ্যক্রমে, যদি এমন কোনো পরিকল্পনা থেকেও থাকে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

    পাকিস্তান সতর্ক করেছে-যদি তাদের পানির ন্যায্য অংশ সরিয়ে নেয় হয়, তাহলে সেটিকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

    ভারতের এই হুমকি এখনো কেবল ‘সিদ্ধান্তহীন আশঙ্কা’তেই সীমাবদ্ধ - বাস্তবায়নের জন্য বিশাল ব্যয়, জটিল অবকাঠামো ও অন্তত দুই দশকের প্রস্তুতি প্রয়োজন।

    এই ফাঁকে, আলোচনা আবার শুরু হলে কিছু ইতিবাচক পথ উন্মুক্ত হতে পারে। সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ারে-এ প্রকাশিত এক মত অনুসারে, পাকিস্তান চাইলে এই চুক্তির স্থগিতকরণ আন্তর্জাতিক আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।

    বর্তমান ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার আরও একটি ভয়াবহ দিক হলো ধর্মীয় ভাষার অতিমাত্রায় ব্যবহার, যা দ্বন্দ্বকে আরও উসকে দিচ্ছে।
    এখানে এই উপমহাদেশ ইউক্রেন-রাশিয়া ও ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছে।

    ইউক্রেন সম্প্রতি রুশপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইসরায়েলে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ধর্মীয় রেফারেন্সে ফিলিস্তিনিদের 'আমালেক' হিসেবে অভিহিত করেছেন-যা বাইবেল অনুযায়ী ইসরায়েলের এমন শত্রু, যাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া উচিত।

    ভারতে পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটক-যাদের অধিকাংশ হিন্দু-নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিশোধের দাবি উঠেছে। এই ঘটনায় ভারতের মুসলিমদের ও পাকিস্তানকে প্রায় একইভাবে দোষারোপ করা হয়েছে।

    জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা পর্যন্ত কিছু টিভি চ্যানেলের বিদ্বেষমূলক প্রচারণার নিন্দা করে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত পর্যন্ত এই ধর্মীয় বাকযুদ্ধে শামিল হয়েছেন। তিনি রামায়ণের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন-রাজাধিরাজের কর্তব্য তার জনগণকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা।

    এদিকে পাকিস্তানে, কিছু মহলে দাবি উঠেছে-হিন্দু ও মুসলমান একসঙ্গে বসবাস করতে পারে না।কিন্তু যদি তা-ই হতো, তাহলে কায়েদে-আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের বিভাজনের বিরোধিতা করতেন না। তিনি পাকিস্তানে অমুসলিমদের সমান অধিকার সম্পন্ন নাগরিক হিসেবে কল্পনা করেছিলেন।

    এফএস

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…