এইমাত্র
  • দেশের সব নির্বাচন অফিসে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
  • স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ, স্ত্রী ও প্রেমিক আটক
  • রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্দে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা চান এরদোয়ান
  • ওসমান হাদির ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করছে না বিএনপি
  • ছুটির দিনেও খোলা থাকবে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়
  • ওসমান হাদির ওপর হামলার পর পানছড়ি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার
  • ১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জাবালে নূর টাওয়ারের আগুন
  • চট্টগ্রাম-১৫ আসনে বিএনপি’র প্রার্থীকে জরিমানার পর শোকজ
  • আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত ৫৭২
  • আজ রবিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পার করে দিচ্ছে আরাকান আর্মি!

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১২:২২ পিএম
    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১২:২২ পিএম

    টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পার করে দিচ্ছে আরাকান আর্মি!

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১২:২২ পিএম

    মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাত, সামরিক অভিযানের ভয়াবহতা এবং আরাকান আর্মির নির্যাতনের মুখে গত দেড় বছরে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ২০১৭ সালের পর এটিই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সবচেয়ে বড় ঢল।

    তবে এবার আর সরকারি বাহিনী নয়, রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী এখন রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৩৫ হাজার টাকা আদায় করে সীমান্ত পার করে দিচ্ছে। আবার টাকা না দিতে পারলে, বিশেষ করে তরুণদের ধরে নিয়ে দেওয়া হচ্ছে অস্ত্র প্রশিক্ষণ- বাধ্য করা হচ্ছে বিদ্রোহী যুদ্ধে যোগ দিতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এমনই তথ্য জানিয়েছে।

    সম্প্রতি রাখাইনের বুশিডংয়ের শ্যালাপ্রাং গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা নুরজাহান (৪৫) নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, 'আরাকান আর্মি আমাদের বলে দিয়েছে। এখানে আর থাকা যাবে না, যার যেখানে যাওয়ার ইচ্ছা চলে যাও। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ভারত- সবখানেই সীমান্ত খোলা। কিন্তু যেতে হলে দিতে হবে ১২ লাখ কিয়েট (প্রায় ৩৫ হাজার টাকা)।'

    তিনি আরও বলেন, 'আমার সঙ্গে ২৫ জন নারী-পুরুষ ছিল, সবাই সীমান্ত পার হয়ে এসেছে। কিন্তু যারা দিতে পারেনি, বিশেষ করে তরুণরা- তাদের ধরে রেখে দেওয়া হচ্ছে যুদ্ধে পাঠানোর জন্য।'

    রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা তরুণ মো. সেলিম (ছদ্মনাম) বলেন, 'আরাকান আর্মি আমাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা পেয়ে ছেড়ে দিলেও কিছুদিন পর আবার ধরে নিয়ে যায়। তারপর ১৭ দিন আটকে রেখে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়। যুদ্ধে যেতে রাজি না হওয়ায় আমাকে মারধর করা হয়। পরে একদিন সুযোগ বুঝে পালিয়ে আসি।'

    বাংলাদেশের সিতওয়েতে সাবেক কনসাল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, 'রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছে আরাকান আর্মি- এটা দেখে বোঝা যায়, রাখাইনের পরিস্থিতি কতটা জটিল। এর প্রভাব বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যেও পড়বে।'

    গত মার্চে কক্সবাজারে ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস আশা প্রকাশ করেছিলেন, পরের ঈদে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ঈদ করতে পারবেন। তখন তার পাশে ছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

    কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। সরকারিভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। উল্টো সীমান্তে নতুন ঢলের মুখে পড়ছে কক্সবাজারের শিবিরগুলো।

    কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, 'প্রায় আট বছর ধরে একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। নতুন করে দেড় লাখ চলে আসায় স্থানীয়দের হতাশা বাড়ছে। অপরাধ, মাদক ও চোরাচালানে রোহিঙ্গাদের জড়িত থাকার অভিযোগ বেড়েছে।'

    নয়নাভিরাম টেকনাফ নয়াপাড়া ক্যাম্পে বসে দুই বৃদ্ধ রোহিঙ্গা বন্ধু-নুর মোহাম্মদ (৭৯) ও দিল মোহাম্মদ (৭৫) আলাপ করছিলেন।

    নুর মোহাম্মদ বলেন, '৩৪ বছর ধরে এখানে আছি। আর কতদিন? মৃত্যুর অপেক্ষায় আছি। হয়তো মাটির নিচে যাব এখানেই। কিন্তু চাই নতুন প্রজন্ম অন্তত দেশে ফিরে যাক।'

    কুতুপালং ক্যাম্পের নুর হালিম বললেন, 'এই জীবন আর ভালো লাগে না। যদি নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা পেতাম, তাহলে এখনই মিয়ানমারে ফিরে যেতাম।'

    টেকনাফ ২-বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, 'সীমান্তে আমাদের সবসময় সতর্কতা জারি থাকে। অনেক অনুপ্রবেশ আগেই প্রতিহত করেছি। তবে রাখাইনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক।'

    শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'রোহিঙ্গারা যে জেনোসাইডের শিকার, সেটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে সব ক্যাম্প সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।'

    জানা গেছে, ২০১৭ সালের পর এবারই সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে। রাখাইনে যুদ্ধ, আরাকান আর্মির দমন-পীড়ন ও সীমান্ত খুলে দেওয়ার ঘোষণা- সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

    তাদের মতে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কেবল আন্তর্জাতিক চাপেই সম্ভব- যেখানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক শক্তি ও প্রতিবেশী মিয়ানমারের সদিচ্ছা আজ প্রশ্নবিদ্ধ।

    এআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…