বিষণ্নতার সঙ্গে নিজের লড়াইকে নিয়ে লেখা আত্মকথামূলক গ্রন্থ ‘আই ওয়ান্ট টু ডাই বাট আই ওয়ান্ট টু ইট টটবক্কি’-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় লেখক বেক সে-হি।
শুক্রবার (১৭ মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুর খবর দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট।
কোরিয়া অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ডোনেশান এজেন্সি শুক্রবার বেক সে-হির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, বেক তাঁর হৃদ্যন্ত্র, ফুসফুস, লিভার ও দুই কিডনি দান করেছেন—যা পাঁচজনের জীবন বাঁচিয়েছে। তবে তাঁর মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ ও তারিখ প্রকাশ করা হয়নি।
সংস্থাটির পরিচালক লি সাম ইয়ল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘জীবনের শেষ মুহূর্তেও বেক যে ভালোবাসা ও আশার বার্তা ছড়িয়ে গেছেন, তা অন্যদের জীবনে নতুন আলো জ্বালিয়েছে।’
বেকের ছোট বোন বেক দা-হি এক আবেগপূর্ণ বার্তায় বলেছেন, ‘আমার বোন সব সময় লেখার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছাতে চেয়েছিল। সে কাউকে ঘৃণা করতে পারত না। আশা করি, এখন সে শান্তিতে থাকবে। আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি।’
১৯৯০ সালে গিয়ংগি প্রদেশের গোইয়াং শহরে জন্ম নেওয়া বেক ছিলেন তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃজনশীল লেখালেখি নিয়ে পড়াশোনা শেষে তিনি একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর কাজ করেন। এই সময়েই তাঁর ‘ডিসথাইমিয়া’ নামে এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতা ধরা পড়ে। প্রায় এক দশক ধরে তিনি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন—সেই অভিজ্ঞতাই পরিণত হয় তাঁর আত্মজৈবনিক বইয়ের মূল উপাদানে।
২০১৮ সালে ‘আই ওয়ান্ট টু ডাই বাট আই ওয়ান্ট টু ইট টটবক্কি’ বা ‘আমি মরতে চাই, কিন্তু টটবক্কি খেতে চাই’ শিরোনামের বইটি নিজ উদ্যোগেই প্রকাশ করেছিলেন বেক। পরবর্তীতে দক্ষিণ কোরিয়ার সাহিত্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মুনহাকদংনে এটি গ্রহণ করে। বইটি দ্রুত দক্ষিণ কোরিয়ায় আলোড়ন তোলে এবং ২০২২ সালে অ্যান্টন হার-এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশের পর আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল সাড়া ফেলে। এটি এখন পর্যন্ত ২৫ টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিক্রি হয়েছে ২০ লাখেরও বেশি কপি।
‘টটবক্কি’ হলো একটি জনপ্রিয় কোরীয় খাবার, যা চালের কেক দিয়ে তৈরি হয় এবং এটি মশলাদার, ঝাল এবং মিষ্টি স্বাদের হয়। বইটির শিরোনামই প্রতিফলিত করে জীবনের দ্বৈত টানাপোড়েন। মৃত্যুচিন্তার গভীর অন্ধকারেও বেঁচে থাকার ক্ষুধা। ২০২৪ সালে দ্য স্ট্রেইটস টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেক বলেছিলেন, ‘আমি নিজের মৃত্যু পরিকল্পনা করছিলাম, কিন্তু হঠাৎ ক্ষুধা পেল, তাই টটবক্কি খেয়ে ফেললাম।’
বেকের লেখার সরল অথচ সংবেদনশীল ভাষা দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণদের কাছে নতুনভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেয়। ২০২০ সালে কে-বুক ট্রেন্ডস-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম মানুষ যেন বোঝে—আমার মতো অনুভব করা লোকেরা একা নয়।’
২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় বইটির দ্বিতীয় খণ্ড ‘আই ওয়ান্ট টু ডাই বাট আই স্টিল ওয়ান্ট টু ইট টটবক্কি’।
এফএস