হাসান আলী (৪৪) জরাজীর্ণ ঘরের বিছানায় বসে জানালার দিকে তাকিয়ে বাইরে আলো দেখার সাথে সাথে ফেলছেন দীর্ঘ শ্বাস।
একসময় সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও একটি দুর্ঘটনাটা থমকে দিয়েছে সবকিছুই। বিরামহীন কর্মযজ্ঞে থাকা হাসান আলী এখন ৮ মাস ধরে বিছানায় কাতরাচ্ছেন দুই পা নিয়ে। সহায় সম্বল যতটুকু ছিলো, তাই চিকিৎসায় শেষ করে এখন অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে। ফলে বিছানায় চলছে হাসান আলীর সাথে পরিবারের কষ্টের নীরব আর্তনাদ। তিনবেলা খাবার জুটবে কিনা, তাই নিয়ে চিন্তায় কাটছে তাদের দিনগুলো।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর মসূয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড বৈরাগিচর গ্রামে থাকেন তিনি। সংসারে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে ৩ মেয়ে। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি ঘরবন্দী হওয়াতে পরিবারটির চরম অর্থ ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
এলাকায় গিয়ে ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিএ পাস করা হাসান আলীর দেশের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছি ইউপির নেপ্রা গ্রামে। বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে তিনি কটিয়াদীর শশুর বাড়িতে থাকছেন। সরকারি কোনো চাকরি না পেয়ে একটি বেসরকারি চাকরি করতেন। বেতন কমের জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে সমিতি থেকে টাকা তুলে অটোরিকশা কিনে চালাতেন। হঠাৎ একদিন সিএনজি তার গাড়িকে ধাক্কা দিলে দুটি পা মারাত্মক জখম হয়। পরে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে ডাঃ আলী আশরাফের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করানো হয়। চিকিৎসার পিছনে পরিবারের ধারদেনা করে যা ছিলো, শেষ হয়ে গেলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে সহায়তা তোলা হয়। এখন পর্যন্ত মোট ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে অর্থ শেষ হওয়াতে ডাক্তারের দেওয়া তারিখ অতিক্রম হলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে। দ্রুত চিকিৎসা না হলে নতুন করে পায়ে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দীর্ঘ জীবনযুদ্ধে হার না মানা হাসান আলী থমকে গেছেন একটি দুর্ঘটনায়। ৮ মাস ধরে বিছানায় শুয়ে সংসারের করুন অবস্থা দেখে মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে আছেন তিনি। পাশাপাশি সমিতি থেকে তোলা অটোরিকশার টাকা পরিশোধের তাগাদাও রয়েছে ক্রমাগত। তিন মেয়ে ও সংসারের ভবিষ্যৎ কী হবে, এই চিন্তা যেনো পিছু ছাড়েনা হাসান আলীর। নিরুপায় হয়ে চেয়েছেন মানুষের সহায়তা।
বৈরাগীচর গ্রামের হযরত আলী, হাসিম মিয়া ও বাবু মিয়া, বাদল বলেন, হযরত আলী খুবই পরিশ্রমী ও পরহেজগার একজন মানুষ। শিক্ষিত হয়েও তিনি জীবিকার তাগিদে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। দুর্ঘটনার পর আমরাও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করেছি। তবে চিকিৎসা ব্যায়বহুল হওয়াতে এখন কুলিয়ে উঠতে পারছেনা। এর জন্য আরো বৃহৎ সহায়তা প্রয়োজন।
স্ত্রী কুলসুম বলেন, একদিকে স্বামী বিছানায় পড়া। রোজগার বন্ধ হয়ে সংসারে অভাব দেখা দিয়েছে। তিনটি মেয়েকে পড়াশোনার খরচ দিতে পারছিনা। একবার খাইলে আরেকবার কী জুটবে, তাই চিন্তা করি। সমিতির টাকা পরিশোধের চাপ তো আছেই।
অসুস্থ হাসান আলী বলেন, নিজেকে নিয়ে চিন্তা করিনা। আমার পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তা করি সবসময়ই। একদিকে আমার কষ্ট, আরেকদিকে পরিবারের অভাব বিছানায় শুয়ে দেখতে হচ্ছে। এখন তো চিকিৎসা খরচ আর পরিবারের ভরণপোষণ দরকার। একটু স্বাভাবিক হলে, কোনো একটা চাকরি কেউ দিলে তা দিয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম।
এনআই