পর্যটকদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবশেষে আগামী শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে মৌসুমের প্রথম পর্যটক ভ্রমণ শুরু হতে যাচ্ছে সৌন্দর্যে ঘেরা প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নভেম্বরে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরতে হবে পর্যটকদের। অবশ্য রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকছে না। তারপরও ব্যবসাকেন্দ্র গুছিয়ে নিচ্ছেন দ্বীপের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, পর্যটকরা দ্বীপে গিয়ে বড়জোর ২ ঘণ্টা অবস্থান করতে পারবেন। এর মধ্যে সামান্য সময় চলবে ব্যবসা-বাণিজ্য। এই সামান্য সময়ের ব্যবসা নিয়েও আশায় বুক বাঁধছেন ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এই দ্বীপে অনধিক দুই হাজার পর্যটক রাত্রিযাপনের সুযোগ পাবেন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ-২ শাখা হতে ১২টি নির্দেশনা সংবলিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর অনুযায়ী প্রণীত ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নির্দেশিকা, ২০২৩’ এর আলোকে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
১. বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না।
২. পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট ক্রয় করতে হবে, যেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
৩. দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
৪. নভেম্বর মাসে পর্যটকরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না।
৫. ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে।
৬. ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
৭. প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
৮. সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৯. কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
১০. সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যে কোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
১১. নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
১২. প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সরকার আশা করে, এই নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি হবে দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
এইচএ