‘শোন মন্ডল, আমি জাহাঙ্গীর ভাইয়ের রাজনীতি করি। তুই আজকে না হয় কাল বিপদে পড়বি, বুঝছোছ। পরে লাথি-ওষ্ঠা খাইয়া গ্রামে পালাবি। এই ব্যাটা, তোর বয়স কত, জাহাঙ্গীরের বয়স কত আর তোর বয়স কত, শা*লারপুত! এই খা*নকির পুত, তোরে থাপড়ামু, এই খা*নকিরপুত, তোরে কোপামু..’- ৪০ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে এভাবেই হুমকি দিতে শোনা যায় ঢাকা মহানগর উত্তরের আওতাধীন উত্তরা পশ্চিম থানা বিএনপি নেতা সাগর আহমেদ আলীকে।
জানা গেছে, রাজনৈতিক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি তিনি রাজধানীর উত্তরার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মন্ডল মো. সোহেলকে মুঠোফোনে হুমকি দেন। ঘটনাটি ইতিমধ্যে দলের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকালে সেই কল রেকর্ডটি সময়নের কণ্ঠস্বর-এর প্রতিবেদকের কাছেও পৌঁছায়।
কল রেকর্ডটিতে শোনা যায়- ‘এই মন্ডল, শোন, আমি জাহাঙ্গীর ভাইয়ের রাজনীতি করি, বুঝছোস? আমার নেতারে যে ছোট কইরা কথা কছ, এইটা আমি সহ্য করমু না, বুঝছোস? আমি তোরে পছন্দ করি, ভালোবাসি, তোরে বলতাছি, তুই তোর রাজনীতি কর, আমাদের আক্রমণ করে কথা কইছ না।’
কল রেকর্ডে সাগরকে বলতে শোনা যায়, ‘তুই কিন্তু টুডে-টুমোরো বিপদে পড়বি। কথাডা বুঝিস, দল আমাদের সবার, বিএনপি। শোন, তুই তোর রাজনীতি কর, আফাজ ভাই আফাজ ভাইয়ের রাজনীতি করুক, জাহাঙ্গীর ভাই জাহাঙ্গীর ভাইয়ের রাজনীতি করুক, সাগর সাগরের রাজনীতি করুক, ঠিক আছে? কাউরে আক্রমণ করে কথা বলিস না, তুই দেশের জন্য কাজ কর, বিএনপির জন্য কাজ কর। পরে লাত্থি-ওষ্ঠা খাইয়া নাক-মুখ লইয়া দেশের বাড়িতে, গেরামে যাইতে অইবো। এইডা বলে রাখলাম, খালি মনে রাহিস।’
রেকর্ডে সাগর আরও বলেন, ‘তুই আফাজ ভাইয়ের রাজনীতি করতাছোস না এহন? তুই আব্বাস ভাইরে লইয়া লেখ, বিএনপিরে লইয়া লেখ। তুই আরেকজনের পুট*কিতে আঙ্গুল দেস ক্যান? তোর বয়স কতো? এই ব্যাডা তোর বয়স কতো? জাহাঙ্গীরের বয়স আর তোর বয়স কতো? শালারপুত।’
কথপোকথনের এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে সাগর বলেন, ‘আফাজ ভাই নেতা কার হাত দিয়া হইছে? মন্ডল? আফাজ ভাইরে নেতা বানাইছে কে? খানকির পোলা তোরে থাপড়ামু, তোর মায়েরে চু*দি খানকির পুত, তোরে কোপামু খান*কির পুত।’
পরে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. সোহেল সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘আমার ফেসবুক প্রোফাইলে প্রকাশিত কিছু রাজনৈতিক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সাগর আহমেদ আলী আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। এরপর থেকে আমি শঙ্কায় ভুগছি।’
ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘ঢাকা-১৮ আসনের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র পোস্টার বা ব্যানারের মাধ্যমে তৈরি হয় না। বরং মানুষের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক, পাশে থাকা এবং সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতার মাধ্যমে তৈরি হয়।’ তার বক্তব্য অনুযায়ী, কিছু সম্ভাব্য প্রার্থী-অনুসারীরা এই পোস্টার ফেস্টুন নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হুমকি দিচ্ছেন।
মো. সোহেল বলেন, ‘এই আহমেদ আলী, আওয়ামী লীগের পরিবারের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বিএনপি পরিবারের যারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন, তা নিয়ে সত্যিই আমি অসন্তুষ্ট। এ বিষয়ে প্রয়োজন হলে প্রমাণও দেখাতে প্রস্তুত আছি।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দলের অভ্যন্তরে কোনো সন্ত্রাসী বা ‘গডফাদার’ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন গুরুত্বপূর্ণ পদে সুযোগ না পায়।’
এ বিষয়ে সাগর আহমেদ আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব ফালতু কথা ভাইয়া। সরাসরি সামনে এসে কথা বলুন। এগুলো মিথ্যা এবং বানোয়াট কথা ভাই। আমি চিনি না তাকে। আপনি কার কথা বলছেন? আমি চিনতে পারছি না। আপনি মনে হয় আমাকে রং নাম্বারে ফোন করেছেন। আমি একটু ব্যস্ত, সামনাসামনি এসে ফোন দিয়েন।’
‘কোন জায়গায় সরাসরি কথা বলবেন ?’-প্রতিনিধি জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। পরবর্তী সময় আবারও তাকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেইন সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘আমি সাগরকে চিনি। সে আমার সঙ্গে রাজনীতি করে এবং পশ্চিম থানায় বিএনপি করে। হুমকির ঘটনা আপনার কাছ থেকে শুনলাম। তবে এটি খুব নিন্দনীয় কাজ হয়েছে। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি, যেহেতু সে আমার সঙ্গে রাজনীতি করে। আমি তার কাছ থেকে এ রকম কাজ প্রত্যাশা করিনি। আমি অবশ্যই এ বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’
তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে এখন অনেক ধরনের মানুষ রাজনীতি করে। আমার অগোচরে কে-কী করছে, তা আসলেই দেখা মুশকিল। সব বিষয়ে তো আমি লক্ষ্য করতে পারিনা। তবে এ রকম কাজ দল কখনই সমর্থন করে না। কারও ব্যক্তিগত কাজের দায়ভার দল নিবে না। বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখবো।’
এসকে/আরআই