নিজের ঘর তোলার স্বপ্ন ছিল বহুদিনের। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে শান্তিতে থাকার ইচ্ছে থেকেই জীবনের সব সঞ্চয় বিনিয়োগ করেছিলেন স্থানীয় এক নারীর কাছে জমির বায়না বাবদ। কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। জমি বিক্রির নামে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে তার।
ঘটনাটি শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের পরাসদ্দী গ্রামে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আঞ্জুমান ইসলাম চারজনকে আসামি করে শরীয়তপুরের পালং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন একই গ্রামের রোকেয়া বেগম(৩৭), তার স্বামী মিন্টু ফরাজি (৪৮), লিটন ফরাজি(৪০) ও বেলায়েত সরদার (৩৬)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত রোকেয়া বেগম ও তার স্বামী মিন্টু ফরাজি জমি বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শুধু আঞ্জুমান ইসলাম নন, রিনা বেগম, লাকি আক্তার, ইয়ারুম বেগম ও আলামিন মুন্সিসহ প্রায় ১৫ জন ভুক্তভোগী একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণার পর থেকে রোকেয়া ও মিন্টু গা ঢাকা দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালে এমদাদুল হকের স্ত্রী আঞ্জুমান ইসলামের কাছে জমি বিক্রির কথা বলে বায়না বাবদ প্রায় ২৫ লাখ টাকা নেন রোকেয়া বেগম। পরবর্তীতে সেই টাকা দিয়ে রোকেয়া ও তার স্বামী দুটি ট্রাক ক্রয় করেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমির দলিল রেজিস্ট্রি করার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন তারা।
একপর্যায়ে আঞ্জুমান ইসলাম জমি বা টাকা ফেরত চাইলে অভিযুক্তরা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন শুরু করেন। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিস ও মিমাংসার চেষ্টা হলেও তিন বছর পেরিয়ে গেলেও জমি বা টাকা ফেরত পাননি তিনি।
ভুক্তভোগী আঞ্জুমান ইসলাম বলেন, জীবনের সব সঞ্চয় তুলে দিয়েছিলাম জমির বায়নায়। ভেবেছিলাম, নিজের একটা ঘর হবে। এখন মনে হয়, ভুল করে জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। রোকেয়া ও মিন্টু টাকা বা জমি কোনোটাই ফেরত দিচ্ছে না উল্টো হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি। স্থানীয় লোকজনের কাছে গিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। পরিবারের শেষ ভরসা ছিল ওই টাকাটা, এখন সেটাও শেষ।
ভুক্তভোগীর চাচা আল আমিন মুন্সি বলেন, আমার ভাতিজি রোকেয়া বেগমকে বিশ্বাস করে টাকা দেয়। কিন্তু এত বছরেও দলিল করে দেয়নি। স্থানীয়ভাবে শালিস করেও ফল হয়নি। বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ দিতে হয়েছে। আমরা চাই, আমার ভাতিজি তার শেষ সম্বলটা ফিরে পাক।
আরেক ভুক্তভোগী রিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী প্রবাসে। রোকেয়া জমি দেওয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়েছে। এখন টাকা ফেরত চাইলে ভয় দেখায়। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।
ইয়ারুম বেগম বলেন, রোকেয়া আমার পরিচিত ছিল। একদিন আমার বাসায় এসে বলে, ‘বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছি, তোমার গহনা একটু দাও পরে ফেরত দেব।’ কিন্তু আজও দেয়নি। এখন নানা অজুহাতে সময় নিচ্ছে।
ভুক্তভোগী লাকি আক্তার জানান, রোকেয়া আমার চাচাতো বোন। বিপদে আছে বলে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। এক সপ্তাহে ফেরত দেবে বললেও দুই বছরেও দেয়নি, উল্টো হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রোকেয়া বেগম বলেন, আমি আঞ্জুমানের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছিলাম এবং তা সময়মতো পরিশোধও করেছি। এখন সে মিথ্যা অভিযোগ করছে। তিনি অন্যদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
পালং থানার অফিসার্স ইন-চার্জ(ওসি) মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তে প্রমাণ মিললে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোকেয়া বেগম দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রলোভন ও প্রতারণার মাধ্যমে নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভুক্তভোগী বানাচ্ছেন। তবে পুলিশের তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে বলেও আশা করছেন এলাকাবাসী।
এসআর