১২ বছর আগে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন বাবাকে দেখতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়ে যান আমিরুল ইসলাম। তখন তার বয়স ৪০ বছর। যুবক থাকাবস্থায় মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে মাঝে মধ্যেই ভুলে যাওয়ার অভ্যাস ছিল তার। বাড়ী থেকে বের হওয়ার পর সেই যে রাস্তা ভুলে গিয়েছিলেন, আর ফিরেননি।
দীর্ঘ ১২ বছর তাকে খোঁজাখুঁজির কমতি রাখেনি বড় ভাই আনসারুল ইসলাম। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, থানায় জিডি এমনকি স্থানীয় ক্যাবল টিভিতেও ভাইয়ের ছবি দেখিয়ে খোঁজার চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে খোঁজ মেলে নি তার।
অবশেষে ভাইয়ের খোঁজ পেয়েছেন আনসারুল ইসলাম। বুধবার (৫ নভেম্বর) সকালে তিনি গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে এসেছেন তাঁর নিখোঁজ ভাইকে। দীর্ঘদিন পর ভাইকে ফিরে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা ভাই-বোন ও প্রতিবেশীরা।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের মাহৎপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা পেষু মোহাম্মদের ছেলে আমিনুল ইসলাম (৫২)। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রংপুর মেডিকেলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়ে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। গত ২ নভেম্বর ফেসবুকের ভিডিও দেখে জানতে পারেন মেহেরপুরে জেলার সদর উপজেলার মনিরামপুর এলাকায় তার ভাই আছেন। মোবাইলে যোগাযোগ করে সেখান থেকে তাকে বাড়ীতে নিয়ে এসেছেন তিনি।
বড়ভাই আনসারুল ইসলাম জানান, ‘দিনাজপুরে গাড়ী মেরামতের কাজ করতো আনসারুল। সেখানে তার ওস্তাদ মাথায় রেঞ্জ দিয়ে বাড়ী দিলে আঘাত পায়। এরপর থেকে মাঝে মধ্যেই ভুলে যাওয়ার অভ্যাস ছিল। পরে বাড়ীতে ফিরে কৃষি কাজে করছিল সে। বিয়েও দিয়েছিলাম, কিন্তু স্ত্রী সুন্দরী হওয়ায় ছয় মাস পর সহজ-সরল ভাইটাকে রেখে চলে যায়। ২০১৩ সালে বাবাকে নিয়ে রংপুরে চিকিৎসাধীন ছিলাম দেড়মাস। বাবাকে দেখতে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় সে। খুজে পাওয়া যায়নি।’
ভাইকে পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি আরও জানান, ‘যখন মেহেরপুরে ১২ বছর পর আমার সামনে আমিরুলকে আনা হলো, বলা হলো কে এই লোক, চিনো? এক থেকে দেড় মিনিট পর ভাই বলে চিৎকার দিয়ে বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। এতদিন পর ভাইকে দেখা, মুখে ভাই ডাক শোনার যে, কি আনন্দ এটা মুখে বলে বোঝানো সম্ভব নয়।’
স্বজনরা জানান, ‘নিখোঁজের পর বেচেই ছিলেন তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা পেষু মোহাম্মদ। তিনিও ছেলেকে খুঁজতেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে মারা যান তিনি। তবে বাড়ীতে ফেরা আমিরুল ইসলামকে এখনো বাবার মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। শারীরকি ভাবে অসুস্থ, তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে তার বাড়ীতে ফেরার খবরে এক নজর দেখতে ছুটে আসছে শত শত মানুষ। ছোট ভাইকে খোঁজার জন্য বড় ভাইয়ের চেষ্টার প্রশংসা করছেন অনেকেই।
আমিরুলের ভাতিজা রনি ইসলাম। পঞ্চগড় জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। তিনি জানান, ‘চাচা বাড়ীতে এখনও ছোট রনিকে খুজছেন। আমি যে বার বার বলছি আমি সেই ছোট রনি। সেটা উনি মানতে নারাজ।’
প্রতিবেশীরা বলছেন, ‘ছোট বেলা থেকে আমিরুল ইসলাম সহ তার অন্য দুই ভাই এবং ৩ বোনকে বাবার মত স্নেহ আদর করে বড় করেছেন বড় ভাই আনসারুল ইসলাম। ভাই হারানোর পর তিনি সব সময় আফসোস করতেন, মন খারাপ থাকতো। ভাই ফেরার পর থেকে তাকে হাস্যোজ্জল মনে হচ্ছে।’
বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি দুরুল হোদা জানান, ‘নিখোঁজ আমিরুল ফেরার খবর থানায় অবগত করেনি তার ভাই। তারা অবগত না করলে আমরা খোঁজ খবর নিবো। তবে এটা ভালো খবর যে, পরিবারটি দীর্ঘদিন পর তার স্বজনকে খুজে পেয়েছে।’
এসএম