নির্মানাধীন প্রকল্প রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার সফল অপারেশন। এতে আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ এর নিবিড় তত্ত্বাবধানে নিরপত্তার শর্ত পূরণ করে নির্মাণাধীন এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে। শুধু তাই নয় পারমানবিক জ্বালানি লোডিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ ধাপেও অগ্রসর করেছে প্রকল্পটি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রথম ইউনিটের জ্বালানি লোডিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। এর ধারাবাহিকতায় প্রকল্পের পূর্ণ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা সফলভাবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল) অপারেশন টিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহেদুল হাসান।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা জাতীয় গ্রিড থেকে রূপপুর সাইটে বিদ্যুৎ নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা কমিশনিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। প্রতিদিন জাতীয় গ্রিড থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এনে সাইটের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিস্টেমের স্থিতিশীল অপারেশন প্রমাণ করছে যে ভবিষ্যতে রূপপুর কেন্দ্র নিজস্ব উৎপাদিত বিদ্যুৎ ও একই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে। অর্থাৎ যে নেটওয়ার্ক আজ গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিচ্ছে, ভবিষ্যতে সেই নেটওয়ার্ক দিয়েই দেশকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ দেবে কেন্দ্রটি। এই দ্বৈত সক্ষমতা পুরো প্রকল্পকে আরও শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে।
রূপপুর প্রকল্পের উপ-পরিচালক ড. মোঃ খালেকুজ্জামান জানিয়েছেন, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের কমিশনিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পাওয়ার ইভেকশান (বিদ্যুৎ সরবরাহ বা নিষ্কাশন ব্যবস্থা) সংশ্লিষ্ট তিনটি ফ্যাসিলিটি -00UAB: ৪০০ কেভি জিআইএস বিল্ডিং, 00UAB: ২৩০ কেভি জিআইএস বিল্ডিং এবং 00UAG: অটোট্রান্সফরমার স্ট্রাকচার টেম্পোরারি অপারেশনের জন্য নেওয়া হয়েছে। টেম্পোরারি অপারেশনে অন্তর্ভুক্ত করার পূর্বে ফ্যাসিলিটিগুলোর সকল সিস্টেমের ইনডিভিজুয়াল টেস্টিং আই পরিদর্শন যথাযথ কমিশনিং প্রক্রিয়া অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়।
তিনি আরো জানান, টেম্পোরারি অপারেশন চালানোর আগে টেস্ট প্রোগ্রাম অনুযায়ী যেসব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে তাহলে- ৪০০ কেভি ও ২৩০ কেভি জিআইএস-এর সকল ইন্ডিভিজুয়াল টেস্টিং, ইন্টারলক, প্রোটেকশন ও কন্ট্রোল সিস্টেম টেস্টিং, দুটি অটোট্রান্সফরমারের ইন্সটলেশন রেজিটেন্স, রেশিও টেস্ট, উইন্ডিং রেজিটেন্স, ওএলটিসি ফাংশোনালিটি, রিলে প্রটেকশন, ইন্টারলক জিইএস কন্ট্রোল সিস্টেম পরীক্ষা, পাওয়ার সাপ্লাই, ভেন্টিলেশন, ইন্টারমেন্টসান অ্যান্ড কন্ট্রোল, ফায়ার ডিটেনশন জিইএস, ওয়াটার-ফায়ার এক্সিগিউসিং সিস্টেম-এর কার্যকারিতা পরীক্ষাসহ অবশিষ্ট কাজ শনাক্তকরণ করে পাঞ্চ লিস্ট প্রস্তুতকরণ এবং এলিমিনেশন ডেডলাইন নির্ধারণ হবে। সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক হওয়ায় ফ্যাসিলিটিগুলো টেম্পোরারি অপারেশনের জন্য গ্রহণযোগ্য ঘোষণা করা হয় বলে জানান তিনি।
অপারেশনাল ব্যবস্থাপনায় ৫টি শিফটে ২০ জন জনবল নিয়োজিত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি শিফটে রিয়েল-টাইম সিস্টেম মনিটরিং, ওয়ার্কডাউন, সুইচিং অপারেশন, গ্যাস প্রেসার ও ট্রান্সফরমার প্যারামিটার যাচাই, অ্যালার্ম স্ট্যাটাস পর্যবেক্ষণ এবং জাতীয় গ্রিডের এনএলডিসি-এর নির্দেশনা অনুযায়ী পাওয়ার সরবরাহ ও অনুমোদন নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ড. খালেকুজ্জামান আরো জানান, টেম্পোরারি অপারেশন চলাকালে সব সিস্টেম ও সরঞ্জাম স্থিতিশীলভাবে চলছে এবং কোনো উল্লেখযোগ্য অপারেশনাল সমস্যা দেখা যায়নি। সকল প্রোটেকশন, কন্ট্রোল ও সুইচিং সিস্টেম প্রত্যাশিত মান বজায় রেখেছে। শিফট লগ, ইভেন্ট রেকর্ড ও দৈনিক রিপোর্ট যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহেদুল হাসান জানান, এ বছর রূপপুর প্রকল্পে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রি-ওসার্ট মিশন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে। এসব মূল্যায়নে কেন্দ্রের নিরাপত্তা, প্রস্তুতি ও অপারেশনাল সক্ষমতা আন্তর্জাতিক মানে উত্তীর্ণ হয়েছে।
সব মূল্যায়নে ইতিবাচক সাফল্যের ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালানি লোডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধাপে অগ্রসর হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি লোডিং সম্পন্ন হওয়ার পর কেন্দ্রটি এনপিসিবিএল অপারেশন টিমের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে রাশিয়ার পারমাণবিক অপারেটিং সংস্থা কনসার্ন রোজেনার্গোঅ্যাটম প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে।
ড. জায়েদুল হাসান বলেন, রূপপুর প্রকল্পের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার সফল অপারেশন, একের পর এক ইতিবাচক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরিদর্শন এবং জ্বালানি লোডিংয়ের প্রস্তুতি সব মিলিয়ে কেন্দ্রটি এখন বাংলাদেশের শক্তি নিরাপত্তার এক নতুন আশার প্রতীক। অপারেটরদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে জাতীয় গ্রিডে রূপপুরের বিদ্যুৎ সরবরাহকে আরও নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল করে তুলবে বলে বলতে পারি।
এসআর