ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি পাঠানোর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এখনো প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের এক সক্রিয় সদস্য শফিকুল ইসলাম। সংবাদ প্রকাশ ও একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি পুলিশ এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের গুয়াগাঁতী গ্রামের হাজী আব্দুস ছোবাহানের ছেলে। আগে গরুর ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত থাকলেও ব্যবসায় লোকসানের পর প্রায় চার বছর আগে তিনি লিবিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে গিয়ে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালি পাঠানো মানবপাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষের কাছে থেকে টাকা নিয়েছেন এর অধিকাংশ মানুষ কে পাঠাতে পারেননি। প্রতিজনের কাছ থেকে ১৯ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিমানে ইতালি পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে প্রথমে সৌদি আরব ও পরে মিশর হয়ে লিবিয়ায় নেওয়া হয়। সেখানে অমানবিক পরিবেশে আটকে রেখে শেষ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্পিডবোটে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে বাধ্য করা হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, চুক্তি অনুযায়ী নিরাপদ ও বৈধ পথে ইতালি পাঠানোর কথা থাকলেও বাস্তবে তাদের জীবন-মরণ পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে ইতালিয়ান কোস্টগার্ড উদ্ধার না করলে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল।
এ বিষয়ে শফিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে তার ভাই আব্দুস ছালাম স্বীকার করে বলেন, তিনি লিবিয়ায় অবস্থান করে ভূমধ্যসাগর হয়ে মানুষ ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কাজে জড়িত এবং এর বিনিময়ে অর্থ পান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মানবপাচারের মতো গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও শফিকুল ইসলাম এখনো এলাকায় অবাধে চলাফেরা করছে। সংবাদ প্রকাশ হলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি। এতে এলাকায় ভীতি ও ক্ষোভ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ অনুযায়ী প্রতারণা বা প্রলোভনের মাধ্যমে কাউকে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানো গুরুতর অপরাধ। এ অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
সেইফ মাইগ্রেশনের উন্নয়ন কর্মী ও রিফিউজি এন্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম বলছেন, মানবপাচার বন্ধে শুধু ভুক্তভোগীদের সচেতন করলেই হবে না, দালালদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রশাসনের কঠোর নজরদারি জরুরি।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আলম বলেন ইতালি মানবপাচার চক্রের যারা আছে তাদের কে গ্রেপ্তার করা হবে। ইতিমধ্যে একটি মানবপাচার চক্রের সদস্য কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সবাই কে আইনের আওতায় আনা হবে।
এসআর