সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে ড্রোন হামলায় নিহত কুড়িগ্রামের উলিপুরের সেনাসদস্য মমিনুল ইসলামকে সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে উলিপুর হেলিপ্যাডে তাঁর মরদেহ আনা হয়। পরে সেখান থেকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর প্রিয়জনকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় আশপাশের গ্রামগুলোতেও হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে সেনাবাহিনীর মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার উলিপুর হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। পরে ২টা ২৬ মিনিটে মরদেহ নিয়ে তাঁর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। বিকেল চারটার দিকে শহীদ মমিনুল ইসলামকে সামরিক মর্যাদায় উত্তর পান্ডুল জামতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর কুড়িগ্রাম ক্যাম্পের মেজর মো. ইনজামামুল আলম, ক্যাপ্টেন রাফসান, চিলমারী ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন তাহসীন তামীম, তাসফিন উল হক, উলিপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম মেহেদী হাসান, উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাঈদ ইবনে সিদ্দিকসহ সেনাবাহিনীর সদস্যবৃন্দ ও স্বজনরা। এর আগে ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল সোয়া নয়টার দিকে মমিনুল ইসলামসহ নিহত শান্তিরক্ষীদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সৈনিক মো. মমিনুল ইসলামের বাড়ি উলিপুর উপজেলার উত্তর পান্ডুল গ্রামে। তিনি দুই কন্যাসন্তানের জনক। বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে এবং ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ বছর।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের স্থানীয় সময় দুপুর ৩টা ৪০ মিনিটে আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কাদুগলি লজিস্টিক বেসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে কুড়িগ্রামের এই সেনাসদস্য ছাড়াও নাটোর, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ ও গাইবান্ধার বাসিন্দারা ছিলেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম প্রায় ১৮ বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বিদেশে যাওয়ার আগে তিনি ছয় মাস প্রশিক্ষণ নেন। চলতি বছরের অক্টোবরে ছুটিতে বাড়িতে এসে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে যান।
মমিনুল ইসলামের মা মনোয়ারা বেগম বলেন,‘যাওয়ার সময় কইছিল, মা কান্না করো না, আমি তাড়াতাড়ি ফিরমু। এইভাবে ফিরবে জানলে বাপধনকে মুই (আমি) বিদেশ যাইতে দিতাম না।’
দূর দেশের মাটিতে বিশ্বশান্তির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মমিনুল ইসলামের এই মৃত্যু গভীর শোকের পাশাপাশি এক ধরনের নীরব গর্বের অনুভূতিও তৈরি করেছে।
এনআই