চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ও জুঁইদণ্ডী—এই দুটি ইউনিয়নের মাঝখানে সাপমারা খালের ওপর একটি জীর্ণ বাঁশের সাঁকোই এখন প্রায় ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন। বছরের পর বছর ধরে স্থায়ী একটি ব্রিজের দাবি জানিয়ে এলেও আজও সেই দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারী–শিশু থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষকে এই বাঁশের সাঁকো পার হতে হচ্ছে।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ও দড়ির জোড়াতালি দিয়ে তৈরি সাঁকোটির বেশ কয়েকটি অংশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। কোথাও বাঁশ ফেটে গেছে, কোথাও আবার দড়ি ঢিলে হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুমে খালের পানি বেড়ে গেলে ঝুঁকি আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। স্থানীয়দের আশঙ্কা, যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
খালপাড়ে দাঁড়িয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা খুশি আক্তারের সঙ্গে। আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, ভালোভাবে ছবি তুলে যেন সরকারের কাছে এই কষ্টের কথা পৌঁছে দেওয়া হয়। তাঁর ভাষায়, দেশের উন্নয়নের কথা শোনা গেলেও তাদের জীবনে সেই উন্নয়নের কোনো প্রতিফলন নেই। প্রতিদিন শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে এই সাঁকো পার হওয়াটাই যেন তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক।
এই সাঁকোর কারণে শিক্ষার্থীরাও পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। স্থানীয় ঠান্ডা মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ঝুঁকির কারণে অনেকেই কাছের স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। দূরের স্কুলে যেতে হয় ঘুরপথে। সাঁকোর ওপর উঠলেই বাঁশের নড়বড়ে শব্দে বুক কেঁপে ওঠে বলে জানায় তারা।
সাঁকোর এক পাশে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অন্য পাশে সরেঙ্গা বাজার। বাজার সদাই, চিকিৎসা, শিক্ষা ও কর্মস্থলে যাতায়াতসহ খুরুস্কুল ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষকে প্রতিদিন এই সাঁকোর ওপর দিয়েই চলাচল করতে হয়।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ দফাদার জামাল উদ্দিন বলেন, “জনপ্রতিনিধিরা পরিদর্শনে এসে আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।” তাঁর দাবি, পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই এই সমস্যায় ভুগছে এলাকাবাসী, অথচ আজও ভরসা সেই বাঁশের সাঁকো।
এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন, “সাপমারা খালের ওপর একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব আন্ডার-১০০ ব্রিজ প্রকল্পে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললে দ্রুত কাজ শুরুর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।”
উপজেলা প্রশাসনও জানিয়েছে, প্রস্তাবটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে স্থানীয়দের বক্তব্য একটাই—প্রস্তাব আর আশ্বাস নয়, তারা চায় দৃশ্যমান কাজ। বছরের পর বছর অপেক্ষার পর এখন তাদের প্রশ্ন, আর কতদিন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়েই চলতে হবে?
এনআই