জেঁকে বসেছে শীত। হিমেল বাতাস, কুয়াশা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনভর সূর্যের আলোর দেখা না মেলায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতে একদম জবুথবু অবস্থা। পৌষের শীতে মানুষ রীতিমতো কাঁপছে। প্রচণ্ড এই শীতে ঠান্ডাজনিত রোগও বেড়েছে। শীতবস্ত্রের দোকানেও ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার (২১ ডিসেম্বর) যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শনিবার তাপমাত্রা ছিল ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরও কয়েকদিন এমন আবহাওয়া থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঘন কুয়াশার দেখা মিলছে। ফলে সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে অল্প গতিতে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। হাড়কাঁপানো শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে তারা উপার্জনের জন্য বাইরে যেতে পারছেন না। তারপরও অনেকেই বাধ্য হয়ে কাজের উদ্দেশ্যে ছুটছেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীত জেঁকে বসায় অনেকেই বাড়ির সামনে বা রাস্তার পাশে খড়খুটোতে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তাপ নিচ্ছেন। চুড়ামনকাটি গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও দেলোয়ার জানান, “ঘরের মধ্যে শীত কিছুটা কম হলেও বাইরে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা। তাই কয়েকজন মিলে আগুন জ্বালিয়ে শীত তাড়ানোর চেষ্টা করছি।”
যশোর শহরের দড়াটানায়, মুজিব সড়ক, এইচএমএম আলী সড়ক, স্টেডিয়ামপাড়ার হকার্স মার্কেট, কালেক্টরেট মার্কেট ও জিলা পরিষদ মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। ভ্যান, গাড়ি ও রাস্তার পাশের দোকানে নিম্ন আয়ের মানুষরা সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার, হুডি, গরম মোজা ও উলের টুপি কিনছেন। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই দিন ধরে শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় শীতের কাপড়ের ক্রয়বিক্রয় বেড়েছে।
যশোর শহরতলী বাহাদুরপুর এলাকার ইমরান হাসান টুটুল জানান, “প্রচণ্ড শীতে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর। শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।”
কাশিমপুর গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান, “এমন শীত পড়তে থাকলে কৃষকের দুর্ভোগের শেষ নেই। কুয়াশায় ধানের চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খোলা মাঠের বাতাসে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
রোববার সকালে চুড়ামনকাটি বাজারে শ্রম বিক্রির আশায় কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। নিম্ন আয়ের এসব মানুষ শীতে কাঁপছেন। আশাদুল ইসলাম ও মহব্বত আলী জানান, “কিছু করার নেই। শীতে ঘরবন্দি থাকলে পেট ভরবে না। তাই বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধানে এসেছি।”
চুড়ামনকাটিতে সবজি বিক্রি করতে আসা কয়েকজন চাষি জানান, শীত উপেক্ষা করে খুব সকালে পাইকারি বাজারে সবজি নিয়ে এসেছেন। ভোরের কনকনে ঠান্ডায় খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপরও ঘরে বসে থাকা সম্ভব নয়। সবজি বিক্রি শেষ হলেই বাড়ি ফিরে যাবেন।
মোটরচালিত ভ্যান চালক আইয়ুব হোসেন জানান, “হিমেল বাতাসে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। ভ্যান চালানোর সময় হাত-পা কোকঁড়া লাগছে। চাল-ডাল কেনার মতো টাকা আয় করতে পারলেই বাড়ি ফিরে যাব।”
এদিকে শীতের প্রকোপের সঙ্গে বেশির ভাগ শিশুরা সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বয়স্ক মানুষরাও শীতজনিত রোগে পড়ছেন। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। বর্হিবিভাগ থেকেও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শতাধিক মানুষ চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, “হাসপাতালে শীতজনিত রোগী বেড়েছে। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। গরম কাপড় ছাড়াও হাত ও পায়ে মোজা পরাতে হবে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত থেকে কোনো বয়সের মানুষ ঝুঁকিমুক্ত নয়। তাই সকলকে সচেতন হতে হবে।”
এনআই