জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব এবং চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী মীর আরশাদুল হক দলটির সব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) সংসদীয় আসনে এনসিপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন না করারও ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনেই তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের তথ্য জানান। আজ সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে তিনি এসব তথ্য জানান।
মীর আরশাদুল হক এনসিপিতে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিবের পাশাপাশি নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য, মিডিয়া সেল ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য, পরিবেশ সেলের প্রধান এবং চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–১৬ আসনে দলটির মনোনয়নও পেয়েছিলেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সাবেক সহসভাপতি।
ছাত্রজীবনে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্দোলন-প্রতিবাদেও যুক্ত ছিলেন মীর আরশাদুল হক। এর ধারাবাহিকতায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি প্রথমে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যুক্ত হন। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা এনসিপি গঠন করলে তাতেও যোগ দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে ‘একটি বিশেষ ঘোষণা’ শিরোনামে লেখা পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি এই মুহূর্তে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলাম। চট্টগ্রাম-১৬ সংসদীয় আসনে (বাঁশখালী) এনসিপির হয়ে আমি নির্বাচন করছি না। আজকে একটি বিশেষ দিনে এই ঘোষণাটি দিচ্ছি, যেদিন দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। সুস্বাগতম।’
এনসিপি নিয়ে হতাশার কথা জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এনসিপির প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত গত ১০ মাসের অভিজ্ঞতায় আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে এই দল ও দলের নেতারা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখে এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলাম, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। দল ও বড় অংশের নেতারা ভুল পথে আছেন বলেই মনে করি আমি। এই ভুল পথে আমি চলতে পারি না। এই মুহূর্ত থেকে এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকবে। তাদের প্রতি শুভকামনা রইল।’
গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন আরশাদুল। তিনি লিখেছেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ও জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার কোনো বিকল্প নেই৷ জুলাই অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে তারেক রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বক্তব্য পর্যালোচনা করে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই মুহূর্তে সবাইকে ধারণ করে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা ও সক্ষমতা তিনিই রাখেন।’
‘যখন অন্যান্য দল ধর্ম ও পপুলিজমকে প্রধান এজেন্ডা করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাচ্ছে, তখন তারেক রহমান স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে একটি ক্লিয়ার ভিশন জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন। আগামী দিনে জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত সমাধানের কথাও তিনি বলছেন। এই স্মার্ট অ্যাপ্রোচ আমাকে আকৃষ্ট করেছে’—লিখেছেন আরশাদুল হক।
এই নেতা আরও লেখেন, ‘তরুণদের উচিত হবে পপুলিজম বা কোনো হুজুগে প্রভাবিত না হয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থ, ভবিষ্যত ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করে তারেক রহমানের জনকল্যাণমূলক ভিশন বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও সমর্থন জানানো। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে রাখলাম।’
মীর আরশাদুলের পদত্যাগের বিষয়ে এনসিপির কোনো প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে দলটির একটি সূত্র জানায়, এনসিপি নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সমঝোতার আলোচনায় রয়েছে। এ বিষয়ে দলের একটি অংশের সমর্থন থাকলেও অন্য অংশ মানছে না। জামায়াতের সঙ্গে যেতে যাঁরা রাজি নন, তাঁদেরই একজন মীর আরশাদুল হক।
যোগাযোগ করা হলে মীর আরশাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনসিপি সামগ্রিকভাবে ভুল পথে চলে গেছে। তারা তরুণদের নতুন দল হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। এই দলে থেকে আগামী দিনের অনিশ্চয়তা ও কঠিন সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব না বলে আমার মনে হয়েছে। সেজন্যই পদত্যাগ করেছি। দেশের স্বার্থে আমি বিএনপি ও তারেক রহমানকে সমর্থন করছি।’
তার এই ঘোষণাকে ঘিরে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এসকে/আরআই