চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কনকনে শীতের রাতে সড়কের পাশে পরিত্যক্ত স্থানে পড়ে থাকা দুই শিশুকে ঘিরে দেশজুড়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, পুলিশি অনুসন্ধানে তার নেপথ্যে উঠে এসেছে একটি জটিল পারিবারিক ট্র্যাজেডির চিত্র। ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় শিশুদের বাবা মো. খোরশেদ আলমকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) গভীর রাতে আনোয়ারা উপজেলার ৬ নম্বর বারখাইন ইউনিয়নের শোলকাটা এলাকা থেকে ৪ বছরের আয়েশা আক্তার ও ১৪ মাস বয়সী মোরশেদকে অসহায় অবস্থায় উদ্ধার করেন এক সিএনজি চালক। পরে ওই চালক মহিম উদ্দিন শিশু দুটিকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আশ্রয় দেন। খবর পেয়ে আনোয়ারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা জানান, ছোট শিশুটি জন্মগত জটিল রোগে আক্রান্ত এবং বড় শিশুটির চর্মরোগ রয়েছে।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তর শিশু দুটির সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আনোয়ারা থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোমেন কান্তির নেতৃত্বে অনুসন্ধানের একপর্যায়ে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১২টার দিকে পার্শ্ববর্তী বাঁশখালী উপজেলা থেকে শিশুদের বাবা মো. খোরশেদ আলম (৩৫)-কে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।
শিশুগুলোর খোরশেদ আলম বলেন, তার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহামনি এলাকায়। পারিবারিক বিরোধ ও স্ত্রীর অপকর্মের জেরে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি বাঁশখালীর মিয়ারবাজার লস্করপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন।
তিনি দাবি করেন, প্রায় ৫-৬ মাস আগে তার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় সংসারের কিছু মালামাল ও প্রায় ১৮ হাজার টাকা নিয়ে যান বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে স্ত্রী ও সন্তানদের কোনো খোঁজ তিনি পাননি।
পেশায় অটোরিকশা চালক খোরশেদ আলম আরও জানান, জীবিকার তাগিদে তিনি মাঝে মাঝে বাঁশখালীর একটি ভাঙারির দোকানেও কাজ করতেন। তার অভিযোগ, তার স্ত্রী প্রতিবন্ধী ছোট শিশুটিকে ব্যবহার করে ভিক্ষাবৃত্তি করাতেন। এ বিষয়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় জরিমানাও দিয়েছেন বলে দাবি করেন। শিশুদের মায়ের বাড়ি সাতকানিয়া থানাধীন মৌলভীর দোকান এলাকায় বলেও তিনি পুলিশকে জানান।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে খোরশেদ আলমকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ সময় কথা বলার পর আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন,
‘ইতোমধ্যে পুলিশের মাধ্যমে শিশুদের বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। তার বাবা-মাকে এখানে আসতে বলা হয়েছে। যেহেতু তিনি সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন, সে বিষয়ে যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুনায়েত চৌধুরী বলেন, ‘শিশুদের বাবাকে শনাক্ত করে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। শিশুগুলো বর্তমানে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
এদিকে উদ্ধার হওয়া দুই শিশুকে বর্তমানে আশ্রয়দাতা সিএনজি চালকের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে শিশু দুটির সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এসআর