‘আম্বালা ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
দেশের এনজিও সেক্টরে দীর্ঘ তিন দশকের অধিক সময় ধরে অতি সুনামের সঙ্গে প্রান্তিক সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবা দিয়ে আসছে ক্ষুদ্রঋণ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আম্বালা ফাউন্ডেশন’। দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগময় পরিস্থিতিতেও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৯৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এনভায়রনমেন্ট কাউন্সিল বাংলাদেশ বা সংক্ষেপে ইসি বাংলাদেশ নামে যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে আম্বালা ফাউন্ডেশন করা হয়। সুনামের সাথে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ।আম্বালার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ সিকদারের ত্যাগ, শ্রম, মেধা, ধৈর্য্য আর তার সঙ্গে মিশে থাকা একদল সুদক্ষ, আন্তরিক কর্মীর সমন্বয়ে বিন্দু থেকে সিন্দুতে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জানা যায়, বর্তমানে আম্বালা ফাউন্ডেশন দেশের ২১টি জেলার ২৪১টি শাখায় দুই হাজারের অধিক কর্মীর নিরলস পরিশ্রমে এক লক্ষ উনিশ হাজার মানুষের মাঝে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সুসংগঠিত ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করে আসছে। এছাড়াও দেশের যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগময় পরিস্থিতিতেও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের স্বাবলম্বী করার জন্যও কাজ করে যাচ্ছে আম্বালা। তারই অংশ হিসেবে গত বন্যায় দুর্গতদের সার, বীজ এবং নগদ আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।পাশাপাশি বন্যা কবলিত অঞ্চলে স্বল্প সুদে ঋণপ্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনেও ভুমিকা রেখেছে আম্বালা। এছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান এবং ঔষধ সরবরাহ, ক্ষতিগ্রস্থদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। মানুষের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বিনামূল্যে গবাদি পশুর চিকিৎসা ও ঔষধ সরবরাহের দৃষ্টান্ত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। অন্যদিকে ‘আম্বালা ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। BD Rural Wash প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ, উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। গ্রামের মানুষের জন্য নতুন পানির পাম্প স্থাপন, স্বাস্থ্যকর শৌচাগার নির্মাণ এবং হাইজিন সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদান করে, যাতে তারা পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৫৪০ টি খানার ২২১৬০ জন মানুষ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন এর সুবিধাভোগী হয়েছেন। এতে করে গ্রামীণ সমাজে পানিবাহিত রোগের হার কমেছে এবং মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ ফাইন্যান্সিং এন্ড ক্রেডিট এনহান্সমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪টি জেলার ৪৮ উপজেলার ১৯৯টি গ্রামে ৫৩৪ জন লোককে কোটি কোটি টাকার অধিক ঋণ বিতরণ করেছে, যা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা করছে। এই ঋণের লক্ষ্য হলো সমাজভিত্তিক উদ্যোগ বা কমিউনিটি-ভিত্তিক ব্যবসাগুলোকে অর্থায়ন করা, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথম ডিজিটাল পাশবুক চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। খুব শিগগিরই ইমার্জেন্সি লোন সার্ভিসও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।আম্বালা ফাউন্ডেশন ক্ষুদ্রঋণ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানেই থেমে থাকেননি। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ২০১২ সালে ঢাকা বিভাগের একমাত্র কমিউনিটি রিডিও 'রেডিও বিক্রমপুর এফএম ৯৯.২' প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা প্রান্তিক, পশ্চাৎপদ এক জনগোষ্ঠীর কাছে নিয়ে গেছেন উন্নয়নের বার্তা, শিক্ষার শক্তি। এই প্রচার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, নারী ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ প্রতিরোধ, শিক্ষা, বিনোদন, স্বাস্থ্যসেবা ও সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রোগ্রাম পরিচালনা করে থাকে। যা নিয়মিত শুনেন প্রায় ৯ লক্ষ শ্রোতা। নির্বাহী পরিচালক আরিফ সিকদারের নতুন নতুন কার্যক্রমে বিকশিত হচ্ছে আম্বালা ফাউন্ডেশন। তার মধ্যে অন্যতম 'স্বপ্নযাত্রা'। আর্থিক কারণে যেসকল মেধাবীরা পড়া লেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের পড়ালেখা যেন বন্ধ না হয় সেই স্বপ্ন থেকেই আম্বালা প্রতিষ্ঠা করেন স্বপ্নযাত্রা। যুগান্তকারী এই উদ্যোগ শত শত জীর্ণ পরিবারকে দিচ্ছে আলোর দিশা। দরিদ্র পরিবারের একজন ছেলে/মেয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ লেখাপড়ার দায়িত্ব নিচ্ছেন স্বপ্নযাত্রা। ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয়ে এর ব্যপ্তি প্রতিবছর বাড়ছে। মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে স্বপ্নযাত্রা বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ১৬২ (১০৮ ছেলে ও ৫৪ জন মেয়ে) স্বপ্নযাত্রা থেকে শিক্ষা সহায়তা গ্রহণ করছে। দরিদ্র, মেধাবী, সুবিধাবঞ্চিত যেকোনো শিক্ষার্থী এই সহায়তার অনুর্ভুক্ত হতে পারে। আম্বালা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ সিকদার বলেন, ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু হলেও আম্বালা ফাউন্ডেশন ১৯৯৮ সাল থেকে এ দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে আর্থিক সেবা কার্যক্রমকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ক্ষুদঋণ কার্যক্রম শুরু করি। আমরা প্রথম থেকেই ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালনা করে আসছি।আমরা বর্তমানে ২১টি জেলায় কাজ করছি। আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়, আমরা চাই আগামীতে দেশের ৬৪টি জেলাতেই আম্বালা ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সেই সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।