কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত ঘেঁষা মিয়ানমারে দু'পক্ষের সংঘাতের ভয়াবহের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। চলমান সংঘর্ষের রোশানল থেকে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পুনরায় সেই দেশটির নাগরিক, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরা এপার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশে করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য সুত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিনে রাতের অন্ধকারে টেকনাফ উপজেলার অন্তর্গত সাবরাং ইউপির শাহপরীরদ্বীপ, সাবরাং, নয়াপাড়া, হারিয়াখালী, হ্নীলা,হোয়াইক্যং,ইউপির নাফনদ ঘেঁষা বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে মানবপাচার জড়িত দালাল চক্রের সহযোগিতায় অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। সুত্র বলছে গত কয়েক দিনে সীমান্তে দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এপারে প্রবেশ করার পর উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে তাদের আত্মীয় স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে দেশের সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বিজিবি-কোস্ট গার্ড সদস্যরা গোপনে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা অনেক রোহিঙ্গাকে আটক করার পর পুশব্যাক করার মাধ্যমে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, টেকনাফে শাহপরীরদ্বীপ ঘোলার চর সংলগ্ন এলাকা কয়েক জন জেলে সময়ের কন্ঠস্বরকে জানান, গত ঈদের দিন রাত থেকে এই পর্যন্ত দ্বীপের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের সংঘাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছে বেশ কিছু রোহিঙ্গা। তারা এপার ওপারের থাকা অর্থলোভী দালালদের সহযোগিতায় এপার সীমান্তে অনুপ্রবেশ করার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা আত্মীয়-স্বজনের কাছে চলে গিয়েছে।
মিয়ানমারে দু'পক্ষের চলমান সংঘর্ষ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ওপারের নাফনদীর তীর সংলগ্ন পাড়া গুলোতে আশ্রয় নিয়েছে বলেও জানান তারা।
এদিকে টেকনাফের নাফ নদী সংলগ্ন বেড়ীবাঁধের পয়েন্ট গুলো পরিদর্শন করে দেখা যায়, বাংলাদেশ সীমান্ত সু-রক্ষার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা সদস্যরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দিন রাত কঠোর নজরদারি করে যাচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার গভীর রাতে নাফ নদী সংলগ্ন টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ঘোলাপাড়া ঝাউবন এলাকা দিয়ে মিয়ানমারের জলসীমা অতিক্রম করে আসা রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা এপার সীমান্তে অনুপ্রবেশে করার সময় দেশীয় জলসীমায় দায়িত্বে থাকা কোস্ট গার্ড সদস্যরা নৌকা বোঝাই ২৬ জন রোহিঙ্গা নর-নারীকে আটক করতে সক্ষম হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সত্যতা নিশ্চিত করে উক্ত বাহীনির এক সদস্য দ্বীপ জানিয়েছেন,গোপনীয়তা বজায় রেখে বাচাই বাছাই করার পর অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নর-নারীদের পুশব্যাক করা হবে।
এবিষয়ে টেকনাফ সাবরাং ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, মিয়ানমারে জাতীগত সংঘাতের জের ধরে বিগত ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার মানবতার দেখেয়ি প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় দিয়েছিল। এরপর থেকে এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের লোকালয়ে অবাধ বিচরণ কারণে আমরা স্থানীয়রা নানা সমস্যায় জর্জরিত। বলতে গেলে অত্র উপজেলায় মাদক,মানব পাচারসহ এমন কোন অপরাধ নেই এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরা জড়িত নেই। আবার নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটুক এটা আমরা চাই না। আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আশা করছি আগের মত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরা এপারে অনুপ্রবেশ করতে পারবে না বলেও জানান তিনি।
পূণরায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা করার বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোহাম্মাদ মহিউদ্দীন আহমেদ সময়ের কন্ঠস্বরকে জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি দেশের সীমান্ত সুরক্ষা করার জন্য আমাদের সীমান্ত প্রহরী বিজিবি সদস্যরা সদা জাগ্রত রয়েছে।
গত কয়েক যে সমস্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরা মিয়ানমার জলসীমা অতিক্রম করে এপার সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে। তাদেরকে আটক করে পূণরায় পুশব্যাক করা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
পিএম