স্বামীর অপেক্ষায় ছিলো নববধূ ডলি। শেষ কথা হয়েছে সকালে ফোনে। স্বামী আশা দিয়েছে ৩ ঘন্টা পর দেখা হবে তুমি ঘুমাও। কিন্তু না দেখা করে জীবনের শেষ ঘুমিয়ে পড়েছে স্বামী। তাদের বিয়ে হয়েছে মাত্র ১৭ দিন। এখনো হাতে মেহেদীর দাগ মুছে যায়নি। এরই মধ্যে একটি ঘাতক বাস শেষ করে দিলো এক নবদম্পতির সংসার। নোয়াখালীর চাঁটখিলের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন পলাশ। কাজ করতেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়ার মেয়ে ডলি আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় মাত্র ১৭ দিন আগে। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিলেন নাসির। পথে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাস উল্টে জীবনপ্রদীপ নিভে যায় তার। দুর্ঘটনায় স্বামী নাসিরের মৃত্যু সংবাদ শুনে ছুটে আসেন নববধূ ডলি। এ সময় ডলি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। বারবার স্বামীর লাশের দিকে তাকিয়ে মূর্ছা যান তিনি। এ সময় ডলি ও তার স্বজনদের কান্নার শব্দে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
নিহত নাসিরের স্ত্রী ডলি জানান, ১ মে আমাদের বিয়ে হয়। স্বামী ঢাকায় বাসা নিয়েছেন। সেখানে আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সে উদ্দেশ্যেই তিনি সীতাকুণ্ড আসছিলেন। আমাকে নিয়ে তার আর ঢাকা যাওয়া হলো না। এসব বলতে গিয়েই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি।
শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বসন্তপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টেকনাফগামী রিলাক্স পরিবহনের ডাবলডেকের একটি বাস উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় পাঁচ যাত্রী। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশ সদস্যরা নিহত ও আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে। পরে থানায় আনা হয় দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রবিউল হাসান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ১৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম লোকমান হোসাইন বলেন, ‘বাসটি সকালে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসন্তপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় পাঁচজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়। দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছেন। বাসটি উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের সঙ্গে আমরা কথা বলে জানতে পেরেছি, ভোরে সড়ক ফাঁকা থাকার কারণে বেপরোয়া চালাচ্ছিলেন চালক। যাত্রীদের নিষেধের পরেও গতি কমাননি। চালক ও সহযোগীকে না পেলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কাজ চলছে।’
কুমিল্লা হাইওয়ে রেঞ্জের পুলিশ সুপার খায়রুল আলম বলেন, ‘চালকের চোখে ঘুম নাকি অতিরিক্ত গতির কারণে পাঁচজনের প্রাণ ঝরেছে সে বিষয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কারণ শনাক্ত করা হবে।
এফএস