কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার দেওরা গ্রাম। এই গ্রামসহ খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর এবং আশপাশের ১০টি গ্রামের মানুষকে বরুড়া পৌর সদরে যেতে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। অথচ দেড় কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করে দিলেই ভোগান্তি কমে মানুষদের। কিন্তু, মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরে বারবার ধরনা দিয়েছেন গ্রামবাসী। সবাই রাস্তা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় করেছেন। প্রতিশ্রুতি আর কেউ রক্ষা করেননি। শেষে এলাকাবাসী নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে রাস্তাটি বানিয়েছেন। সরকারি বরাদ্দের আশায় বসে না থেকে গত ১০ দিন ধরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা এক জোট হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি তৈরি করেন।
দেওরা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, রাস্তাটি নির্মাণের জন্য এলাকার লোকজন চেয়ারম্যান, এমপি ও সরকারি দপ্তরে বহুবার আবেদন করেছেন। ভোটের সময় আশ্বাস মিললেও পরে আর কেউ খোঁজ নেননি। অবশেষে গ্রামের লোকজন সরকারি অনুদান ও বরাদ্দের আশায় না থেকে নিজেরাই রাস্তা নির্মাণ করতে শুরু করেছেন।
তারা আরো জানায়, বরুড়া উপজেলার খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর থেকে বরুড়া পৌরসভার দেওড়া পর্যন্ত এ রাস্তা নির্মাণ করছেন তারা। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ করতে গত ১৩ মে থেকে প্রতিদিন সকালে কোদাল-ঝুড়ি নিয়ে চলে আসেন শতাধিক মানুষ। অনেক উৎসবমুখর ভাবে সবাই একসাথে কাজে নেমে পড়ে।
জানা যায়, পৌরসদরে যাতায়াত ছাড়াও, ওই এলাকার বিশাল ফসলের মাঠে জমিতে চাষের জন্য ট্রাক্টর যেতে পারে না রাস্তার অভাবে। ফসল তুলে বাড়িতে নেওয়ার জন্য কোনো গাড়িও নামার সুব্যবস্থা নেই। এই মাঠের জমিগুলোতে পানির সেচ নিয়েও কৃষকদের ভোগান্তি রয়েছে। রাস্তাটি তৈরিতে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ বিভিন্ন পরিমাণে জমি দান করেছেন। জমিদানে কেউই ভিন্নমত পোষণ করেনি।
দেওড়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের এই কাজটি ১৩ মে থেকে শুরু হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৮০-৯০ জন কাজ করছে। সবাই বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে যাচ্ছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা করা হবে। এতে করে পৌরসভার সাথে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন দক্ষিণ খোশবাসের যাতায়াতের সুবিধাভোগ করবে প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ।
পৌরসভার বাসিন্দা দিদারুল আলম বলেন, বরুড়া পৌরসভার দেওড়া থেকে জয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা যায়। অনেকটা পথ ঘুরে তারা স্কুলে যেত। এখন এই রাস্তাটির কাজ শেষ হলে ছাত্র-ছাত্রীরা কম সময়ে এবং অল্প পথ হেঁটেই পৌরসভা থেকে দক্ষিণ খোশবাস ইউনিয়নের জয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে পারবে।
এ বিষয় খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আব্দুর রব বলেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি। নির্বাচনের পর আমি এই বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারবো।
বরুড়া পৌরসভার মেয়র বকতার হোসেন বলেন, তাদের এই মহৎ কাজ দেখে আমি আবেগ ধরে রাখতে পারছি না। এখনো অনেক ভালো মানুষ সমাজে আছে। তারা আমাকে প্রথম থেকে বিষয়টা অবগত করে নাই। তারপরও আমি জানতে পেরে রাস্তার কাজ দেখতে গিয়েছি। শ্রমিকের চায়ের বিলটাও তারা নিজেরাই দিচ্ছে। তারপরও আমি এই কাজের জন্য কিছু টাকা দিবো তাদের বলে আসছি। পরবর্তীতে আমার পৌরসভার বরাদ্দ আসলে আমি ইটের সলিং করে দিবো।
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারমা মং বলেন, আমি শুনেছি রাস্তাটির বিষয়ে। আমি সরেজমিনে পরিদর্শনে যাব, পরে বিস্তারিত জানাবো।