প্রিন্স মামুন। সবাই তাকে চেনেন টিকটকার প্রিন্স মামুন নামে। তার উত্থান মূলত সোশ্যাল মিডিয়া ‘টিকটক’ ও ‘লাইকি’র সুবাদে। বাংলাদেশে এসব অ্যাপ জনপ্রিয়তার পেছনে কিছুটা হলেও মামুনের ভূমিকা আছে। নিজের করা মিউজিক ভিডিও সেখানে পোস্ট দিতেন মামুন। সেখান থেকেই তার পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা।
একটা সময়ে নাচ শিখেছেন মামুন। সেই নাচের ভিডিও অনলাইনে শেয়ার দিতেন। শেয়ার দিতেন অনেক মজার ভিডিও। এভাবেই তার ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অনলাইন থেকে তার জনপ্রিয়তার ঢেউ এসে পড়লো অফলাইনেও। বলা যায়, বাংলাদেশে টিকটকারদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই টিকটকার মামুন। তার ফলোয়ার বা অনুসারীর সংখ্যাও অগণিত। এখন তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে শোরুম বা দোকান উদ্বোধন করেন।
প্রিন্স মামুন ও লায়লা আক্তার ফারহাদ টিকটকের আলোচিত নাম। ফেসবুক-ইউটিউবের সামাজিক মাধ্যমে লায়লাকে সঙ্গে করে বিনোদনভিত্তিক কন্টেন্ট বানিয়ে বরাবরই আলোচনায় ছিলেন মামুন। এই জুটি নানা সময়ে আলোচনায় থেকেছেন। কখনও ঝগড়া করে, কখনও মামুনের নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ তুলে। আবার কখনও মামুনের নামে লায়লা অভিযোগ তুলেছেন শারীরিক অত্যাচারেরও।
এবার সব ছাপিয়ে লায়লা মামুনের নামে করলেন বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা! আর সেই মামলায় প্রিন্স মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (১০ জুন) রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার দাউদকান্দি টোলপ্লাজা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, টিকটকার মামুনের বিরুদ্ধে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়। সেই প্রেক্ষিতে মামুন কুমিল্লায় অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ আমাদেরকে তাকে গ্রেপ্তারের একটি রিকুইজিশন প্রেরণ করে। এরপরই দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি টিম আসলে রাত সোয়া ১২টার দিকে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের সময় প্রিন্স মামুনের পড়নে ছিল কালো প্যান্ট এবং অফ হোয়াইট রঙের গোল গলার একটি গেঞ্জি। গলায় ছিল মোটা একটি চেইন।
সূত্র জানায়, বৃষ্টির মধ্যে একটি প্রাইভেটকারে করে তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
এর আগে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে রোববার (৯ জুন) প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন লায়লা।
অভিযোগে লায়লা উল্লেখ করেন, মামলার বিবাদী আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে আমার গত তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে মামুন আমাকে বিয়ে করবে মর্মে প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। সে আমাকে জানায়, তার ঢাকায় থাকার মত নিজস্ব কোনো বাসা নেই। যেহেতু প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় এবং মামুন আমাকে বিয়ে করবে বলে জানায় তাই তার কথা সরল মনে বিশ্বাস করে তাকে আমার বাসায় থাকার অনুমতি দিই।
২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি মামুন তার মাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাসায় এসে বসবাস করতে থাকে। ওইদিন থেকে সে আমার বাসায় আমার সঙ্গে একই রুমে থাকতে শুরু করে। আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে একাধিকবার আমার সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক স্থাপন করে। মামুন আমার বাসায় থাকাকালে তার বাবা-মা মাঝেমধ্যেই সেখানে এসে অবস্থান করতো। আমি মামুনকে একাধিকবার বিয়ের বিষয় বললে সে বিভিন্ন অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে।
সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ মার্চ মামুন আমার শয়ন কক্ষে আগের মতো আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীসময়ে আমি তাকে বিয়ের বিষয়ে বললে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আমাকে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে।