তের বছর বয়সী এক কিশোরীকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্ষণের দায়ে মো. আলাউদ্দিন (৪৮) নামের এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছে কুমিল্লার আদালত।
মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. আলাউদ্দিন বরিশাল সদর উপজেলার কুন্ডলী পাড়া গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আটগ্রামে কসমেটিকস দোকান খুলে ব্যবসা করতেন। রায় ঘোষণার সময় ধর্ষক আলাউদ্দিন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্ত কৌশলী স্পেশাল পিপি এডভোকেট প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, মামলার রায় আমরা সন্তুষ্ট। আদালত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১৫ ধারা অনুসারে তার বিরুদ্ধে আরোপিত অর্থদণ্ডর অর্থকে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর ক্ষতিপূরণ হিসাবে গণ্য করেছে। দণ্ডিত অর্থ কিশোরী বরাবর পরিশোধ না করলে একই আইনের ১৬ ধারা অনুসারে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ের নিমিত্তে আসামির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ ওই কিশোরীকে ক্ষতিপূরন হিসেবে পরিশোধ করার জন্য ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর কুমিল্লাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, উল্লেখিত আইনের ১৩ ধারা অনুসারে ধর্ষণের কারণে ওই কিশোরীর গর্ভে যে পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে তাকে তার মাতা কিংবা তার আত্মীয় স্বজনের তত্ত্বাবধানে রাখা যাবে। সন্তানটি তার পিতা বা মাতা কিংবা উভয় পরিচয়ে পরিচিত হতে অধিকারী। এ সন্তানের বয়স ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে। এ সন্তানের ভরণপোষণের জন্য প্রদেয় অর্থ সরকার ধর্ষক আলাউদ্দিনের নিকট হতে আদায় করতে পারবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৮ জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী চোখে দেওয়ার কাজল কেনার জন্য উপজেলার আট গ্রামে আলাউদ্দিনের কসমেটিকস দোকান যায়। এ সময় আলাউদ্দিন দোকান ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে ওই কিশোরীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য ভয়-ভীতি দেখায়। কয়েক মাস পর কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার গর্ভে সন্তানের বিষয়টি প্রকাশ পায়। এরপর ওই কিশোরীর কাছ থেকে তার বাবা ঘটনা শুনে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা করেন। পুলিশ আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলে সে ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
পরবর্তীতে পুলিশ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করে। আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ এবং শুনানি ও যুক্তিতর্ক শেষে আসামি আলাউদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ডের রায় ঘোষণা করে।
এআই