এইমাত্র
  • অনিয়ম লুকাতে হাজিরা খাতা নিয়ে অধ্যক্ষের ঢাকা গমন!
  • ৯১ বারের মতো পেছালো রিজার্ভ চুরি মামলার প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ
  • ওবায়দুল কাদের-যুবলীগ সভাপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ
  • আজ ৮ ডিসেম্বর, বরিশাল মুক্ত দিবস
  • পাকুন্দিয়ায় গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা
  • খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছে আগামীকাল সকালে
  • বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বঞ্চিত দুই প্রার্থীর মিছিল-সমাবেশ
  • নির্বাচনী প্রচারে হামলা, সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ বিএনপি প্রার্থীর
  • রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ১ কোটি ১২ লাখ ডলার অনুদান দেবে যুক্তরাজ্য-কাতার
  • অবসর নেওয়ার আগে দেশে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে চান সাকিব
  • আজ সোমবার, ২৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
    জাতীয়

    ৭১-এর এই দিনে

    আজ ৮ ডিসেম্বর, বরিশাল মুক্ত দিবস

    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (বরিশাল) প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৫ এএম
    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (বরিশাল) প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৫ এএম

    আজ ৮ ডিসেম্বর, বরিশাল মুক্ত দিবস

    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (বরিশাল) প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৫ এএম

    আজ ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখ, বরিশাল মুক্ত দিবস। ৭১-এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে আজকের এই দিনে বরিশাল শহর শত্রু মুক্ত হয়েছিলো। সেই যুদ্ধে বৃহত্তর বরিশালের ৯ নম্বর সেক্টরের সহ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ হক বীর বিক্রম।

    বরিশাল মুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে স্মৃতিচারন করে এমএ হক বীর বিক্রম জানিয়েছেন সেই যুদ্ধ দিনের কথা। এমএ হক বীর বিক্রম বলেন, ‘ভোলা, ঝালকাঠিসহ ৯ নম্বর সেক্টরের বৃহত্তর বরিশাল সাব সেক্টরের সবকয়টি উপজেলা শক্রমুক্ত করার পর ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর আমাদের গোয়েন্দা এবং বরিশালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আইউবুর রহমানের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানিতে পারি যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া অঞ্চলের পাক হানাদার বাহিনী নদী পথে ঢাকা যাবার জন্য বরিশাল শহরের ওয়াবদা কলোনী ও ৩০ গোডাউন এলাকায় একত্রিত হয়েছে।’


    ‘জেলা প্রশাসক গোপন সংবাদে জানিয়েছিলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিকেল তিনটার দিকে জেলা প্রশাসকের অফিসে একটি সংক্ষিপ্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় হানাদার বাহিনীর উচ্চ পদস্ত অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন। তাহারা ১৬টি নৌযান (ছোট বড় লঞ্চ) জব্দ করে বরিশাল শহরের নেভাল জেটিতে ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যে হাজির করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।’

    এমএ হক বীর বিক্রম আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পারি ওই নৌযানে প্রায় এক ব্রিগেট হানাদার সৈন্য ৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ভাড়ি অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে ৮ ডিসেম্বর সকাল ছয়টার মধ্যে ঢাকার উদ্দেশ্য যাত্রা করবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ ডিসেম্বর সাব সেক্টরের টাউন সুইসাইডাল কমান্ডার রেজাই সত্তার ফারুকের মাধ্যমে সাব সেক্টরের সকল বেইজ কমান্ডারদের নিয়ে বরিশাল শহরের কীতনখোলা নদীর পূর্ব তীরে সাহেবেরহাটের সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাজাহান ওমরসহ আমি একটি সংক্ষিপ্ত সভা করি।’

    ‘ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় ভারি অস্ত্রে সজ্জিত প্রায় এক ব্রিগেট হানাদার সৈন্য (আনুমানিক ৮ থেকে ৯শ') জনকে আক্রমন করার মতো অস্ত্র আমাদের কাছে নেই। যুদ্ধ বিমানের আক্রমন ছাড়া হানাদারদের প্রতিহত করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি বরিশাল শহরের একমাত্র ওয়াপদা কলোনি ও ৩০ গোডাউন এলাকা ছাড়া পুলিশ লাইনসের উত্তরের অংশ সম্পূর্ন শত্রু মুক্ত রয়েছে বিধায় বরিশাল শহরের সার্কিট হাউজে ওঠা সম্ভব।’

    ‘সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়েছিলো- বরিশাল পুলিশ লাইনসের ওয়ারলেস ভালো থাকলে খুলনা যেহেতু শত্রু মুক্ত আছে সেখানে যোগাযোগ করে ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার এমএ জলিল এবং দক্ষিণ বাংলার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে কথা বলে বিমান সাপোর্ট পাওয়া গেলে ওই বাহিনীকে র্ধ্বংস করা সম্ভব হবে।’

    ‘এ অবস্থায় ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর ভোর ছয়টার দিকে আমরা বরিশাল শহরের উত্তর পার্শ্বের নতুন বাজার খাল দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে বরিশাল শহরের সার্কিট হাউজে গিয়ে উঠি। পরবর্তী সময়ে আমি (এমএ হক)সহ টাউন সুইসাইডাল স্কট কমান্ডার রেজাই সত্তার ফারুক পুলিশ লাইনসে গিয়ে দেখতে পাই সেখানকার ওয়ারলেসের যন্ত্রপাতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।’

    ‘এরপর ব্যাটারি এবং যন্ত্রাংশ সংযোজন করে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হই। পরবর্তী সময়ে সার্কিট হাউজে এসে সেখানে অবস্থানরত সাবসেক্টর কমান্ডারের কাছে বিস্তারিত অবহিত করি। তিনি বলেন আমাকে ওয়ারলেসের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। কারণ তিনি ছিলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সিগনাল কোরের অফিসার। তাকে নিয়ে পুনরায় ওয়ারলেসে নিয়ে যাই। তিনি ওয়ারলেস অপারেট করেন এবং খুলনার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার এমএ জলিলকে সেটে আসার জন্য অনুরোধ করেন।’

    ‘কিছু সময়ের মধ্যে সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিলের সঙ্গে ওয়ারলেসে কথা হয়। তাকে ৮ ডিসেম্বর সকাল ছয়টার মধ্যে নৌযানের মাধ্যমে ভারি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাক সেনাদের ঢাকার উদ্যেশ্যে যাত্রা করার বিষয়ে অবহিত করে এয়ার সাপোর্ট চাওয়া হয়।’

    ‘তখন মেজর এমএ জলিল শুধু উত্তরে বলেছিলেন-অপেক্ষা করো, আমি নুরুল ইসলাম মঞ্জু ভাইয়ের মাধ্যমে এয়ার বেইজ ইন্ডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানাচ্ছি। পরবর্তী সময়ে ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে মেজর এমএ জলিল জানান, ইন্ডিয়ান এয়ার বেইজের তিনটি ফাইটার জেট ৮ ডিসেম্বর সকাল ছয়টার মধ্যে কীর্তনখোলা নদীর উত্তরে নন্দীর বাজার পর্যন্ত এলাকায় আক্রমন চালাবে। তোমরা বরিশাল শহরের উচ্চস্থানে শান্তির প্রতীক সাদা পতাকা উড়িয়ে দিবে এবং নদীর দুই তীরে মুক্তিযোদ্ধাদের মোতায়েন করে রাখবে। যখনই বিমান হামলা শুরু হবে, সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারাও পাকসেনাদের নৌ-যানের ওপর আক্রমন করবে।’

    এমএ হক বীর বিক্রম আরও বলেন, ‘ওই সংবাদের পর আমরা ৮ ডিসেম্বর ভোর থেকে বরিশাল শহরে ১৪৪ ধারা জারি করি এবং শহরের উচ্চস্থানগুলোতে সাদা পতাকা উড্ডয়ন করি। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের নদীর দুই তীরে অবস্থান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে অপেক্ষা করতে থাকি। ৮ ডিসেম্বর ভোর ছয়টার দিকে হানাদার বাহিনীর নৌ-বহর যখন নেভাল জেটি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় তখন আমরা চরম বিব্রত বোধ করি।’

    ‘কারণ তখন ইন্ডিয়ান ফাইটারদের আঘাত হানার কথা কিন্তু কোথাও তাদের দেখা যাচ্ছে না। এদিকে, হানাদার বাহিনীর বিশাল নৌ-বহর এগিয়ে চলছে। হঠাৎ করে ৬ টা তিন মিনিটের সময় দক্ষিণ আকাশে তিনটি ফাইটার জেট দেখা যায়। প্রথমে বরিশাল শহরের উপর দিয়ে ওই ফাইটার জেট প্রদক্ষিণ করে প্রথমে টার্মিনালে একটি বোমা নিক্ষেপ করে সোজা দক্ষিণ দিকে চলে যায়। মুহুর্তের মধ্যে পুনরায় নৌ-বহরের উপর তিনটি ফাইটার জেট চড়াও হয়।’

    প্রথম ফাইটারটি বার্স্ট ফায়ার, দ্বিতীয়টি বোমা নিক্ষেপ, তৃতীয়টি বার্স্ট ফায়ার করতে থাকে। একই সময় নদীর দুই তীর থেকেও মুক্তিযোদ্ধারা নৌ-বহরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। এভাবেই ২০মিনিটের যুদ্ধে পাক সেনাদের নৌ-বহর সম্পূর্ন ধ্বংস হয়ে যায়।’

    ‘হানাদার সৈন্যদের মধ্যে যারা নদী সাঁতরিয়ে কিনারে ওঠার চেষ্টা করে তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে হত্যা করে। এভাবেই ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর বরিশাল পাক হানাদার মুক্ত হয়। সেদিন বরিশাল শহরের আপামর জনসাধারণ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন।’

    মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর বরিশালের সাব সেক্টরের সহ-অধিনায়ক এমএ হক বীর বিক্রম আরও বলেন, ‘বরিশাল মুক্ত দিবসে শত্রু মুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নুরুল ইসলাম মঞ্জু এবং ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিল আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন।’

    ইখা

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    Loading…