পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার মেসকাত (৪১) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। প্রবাসে অবস্থানরত পরকীয়া প্রেমিকার চক্রান্তে দুই লাখ টাকার চুক্তিতে তাকে খুন করা হয়। এই ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।

আটক দুইজন হলো- সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রামের রাজুর স্ত্রী রিক্তা খাতুন (৩০) ও আশাশুনি উপজেলার নৈকাটি গ্রামের নিজাম সরদার (৬০)।

শনিবার (৪ মে) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে যশোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর ওসি রুপন কুমার সরকার তথ্য জানিয়েছে।

ওসি জানান, আটক রিক্তা খাতুন আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন। পাবনার মেসকাত ও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নৈকাটি গ্রামের নিজাম সরদারের মেয়ে সৌদি আরব প্রবাসী নাজমা যশোর সদর উপজেলার পদ্মবিলায় ইলা নামে একটি অটো-রাইস মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। নাজমা স্বামী পরিত্যক্তা। এক জায়গায় কাজের সুবাদে তাদের মধ্যে পরিচয় ও পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে নাজমা সৌদি আরবে চলে যান। নিজ এলাকা পাবনায় চলে যান মেসকাত । কিন্তু তাদের মধ্যে মোবাইলে ফোনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ হতো। নিয়মিত কথা বলতেন।

তাদের এই সম্পর্কের বিষয় জেনে যান মেসকাতের স্ত্রী জুলেখা। এ নিয়ে মেসকাতের সাথে ঝগড়াও হতো। একদিন মেসকাতের কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে তিনি (জুলেখা) নাজমাকে কল করে গালিগালাজ করেন। এতে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় নাজমার। তিনি প্রতিশোধ নিতে মেসকাতকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। নাজমা এই কাজে তার পূর্ব পরিচিত (সাবেক জা) রিক্তা খাতুনের সহযোগিতা নেন। খুনের জন্য বিদেশে বসে রিক্তার সাথে দুই লাখ টাকা চুক্তি করেন। রিক্তা তার মামাতো ভাই যশোর শহরের শংকরপুরের শাহীনের সাথে খুনের চুক্তি করেন। শাহীন পেশায় প্রাইভেটকার চালক। খুন করতে পারলে দুই লাখ টাকা দুজনে ভাগাভাগি করে নেবে বলে চুক্তি করে তারা। অগ্রিম হিসেবে নাজমা সৌদি আরব থেকে ১৫ হাজার টাকা পাঠায়।

ওসি আরো জানান, চুক্তি মোতাবেক খুনের পরিকল্পনা হয়। নাজমা মোবাইলে ফোন করে মেসকাতকে বলেন ঝাউডাঙ্গা বাজারে তার সোনার গহনা রয়েছে। ওই গহনা সাতক্ষীরায় তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। এরপর শাহীন একটি প্রাইভেটকারে করে মেসকাতকে ঝাউডাঙ্গায় নিয়ে যায়। তাকে গাড়িতে ওঠানোর পর কৌশলে ঘুমের ওষুধ সেবন করায় শাহীন। ঘুমিয়ে গেলে তাকে সাতক্ষীরায় না নিয়ে মণিরামপুরে নেয়া হয়। ঘটনার দিন ২ মে রাতে মেসকাতকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে মরদেহ মণিরামপুরের জোকা গ্রামের ধান ক্ষেতে ফেলে পালিয়ে যায়।

এই ঘটনায় অভিযুক্ত শাহীনকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ। ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটির আরো তদন্ত করা হচ্ছে। পেছনে আর কারা আছে তা বের করার চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, নিহতে মেসকাত ভাঙ্গুড়ার শ্রীপুর গ্রামের নিজাম প্রামাণিকের ছেলে। গত ২ মে যশোরের মণিরামপুরের জোকার মাঠের ধান ক্ষেত থেকে মেসকাতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত মেসকাতের ভাই এরশাদ আলী মণিরামপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

আরইউ