এইমাত্র
  • 'জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরতদের জনকল্যাণমুখী হওয়ার নির্দেশ'
  • মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা
  • গোপালগ‌ঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষকসহ নিহত চার
  • মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
  • ঢাকায় আসছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
  • ‘গ্লোবাল ডিসরাপ্টর্স’ তালিকায় প্রথম ভারতীয় হিসেবে নাম লেখালেন দীপিকা
  • জাতীয় এসএমই পুরস্কার-২০২৩ পেলেন ৭ উদ্যোক্তা
  • যশোরে একসঙ্গে ৫০ জোড়া তরুণ-তরুণীর যৌতুকবিহীন বিয়ে
  • বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সম্ভাবনা, বৃষ্টি চলবে ২৮ মে পর্যন্ত
  • রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ২০
  • আজ রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    ঠুনকো অজুহাতে ৪ কি.মি সড়কের সব গাছ কেটে সাবাড়

    মো. আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৬ মে ২০২৪, ০৯:৪৩ পিএম
    মো. আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৬ মে ২০২৪, ০৯:৪৩ পিএম

    ঠুনকো অজুহাতে ৪ কি.মি সড়কের সব গাছ কেটে সাবাড়

    মো. আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৬ মে ২০২৪, ০৯:৪৩ পিএম

    চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি সড়কের একপাশে মাত্র ২৫০ মিটারের একটি ড্রেন নির্মাণ করা হবে। এ জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এই অংশের গাছগুলো কেটে নিতে জেলা পরিষদকে অনুরোধ করেছিল। এখন জেলা পরিষদ সড়কের দুই পাশের প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকার গাছ কেটে ফেলছে। ঠিকাদারের লোকজন ১০দিন ধরে এসব গাছ কাটছে।

    জেলা পরিষদ জানিয়েছে, প্রায় ৩২ লাখ টাকায় ২৫৮ টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে। তবে বাস্তবে এর কয়েক গুণ বেশি গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও ঠিকাদারের লোকজন অতিরিক্ত গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর জেলা পরিষদ বলছে, গাছ কাটার সময় তাদের একজন প্রতিনিধি থাকছে। অতিরিক্ত গাছ কাটার সুযোগ নেই। তবে গত শনিবার সরেজমিন গাছ কাটার স্থানে জেলা পরিষদের কোনো প্রতিনিধি দেখা যায়নি। সড়কটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদর থেকে বেরিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও নাচোল উপজেলার ভেতর দিয়ে নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সদরে গিয়ে শেষ হয়েছে।

    চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কেন্দুল থেকে আমনুরা ঝিলিম বাজার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে গাছ কাটা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ সম্প্রতি গাছগুলো বিক্রি করেছে। অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে যখন গাছ কেটে ফেলার বিষয়টি তুমুলভাবে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, ঠিক তখনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই গাছগুলোতে কুড়ালের কোপ পড়ছে।

    আজ সকালে কেন্দুল থেকে আমনুরা জুটমিল পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে শিমুল, কড়াই, শিশুসহ নানা প্রজাতির শত শত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কিছুদিন আগেও ছায়াঘেরা আমনুরা ঝিলিম বাজারটি এখন খাঁ খাঁ করছে। কাটা গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে সড়কের দুই ধারে।

    আমনুরা ঝিলিম বাজারের হোটেল দোকানদার সেরাজুল ইসলাম বলেন, এ বাজারে ২৫০ মিটার ড্রেন নিমার্ণ করা হচ্ছে। কিন্তু সড়কের দুই ধারের শত শত গাছ কাটা হচ্ছে। এটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকেই হুমকি-ধামকির শিকার হয়েছে। ঠিকাদাররা বলছে ১০-১২টি গাছ কাটা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে শত শত গাছ কাটা হচ্ছে।

    ঝিলিম বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার গিয়ে কেন্দুল গ্রামের কৃষক শিষ মোহাম্মদের সাথে দেখা হয়। তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ক্ষোভের সাথে বলেন,আমরা মাঠ থেকে কাজ করে এই গাছগুলোর ছায়ার নিচে দাড়াতাম। তাতেই শরীরটা ঠান্ডা হয়ে যেতো। কিন্ত কেনো জানি গাছগুলো কাটলো তা বুঝতে পারছি না। বহু পুরোনো গাছগুলো সাধারণ জনগন কাটতে বাধা দিতো। কিন্ত, উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছের লোকজন গাছগুলো টেন্ডার নিয়ে কাটছে। তাই কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। তারা অনেক প্রভাবশালী। তাছাড়া ঝিলিম বাজারে ছোট অল্প জায়গায় ড্রেন নিমার্ণ হচ্ছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শেষ সীমানা কেন্দুল পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকার গাছ কাটা হচ্ছে।

    কেন্দুল এলাকায় গাছ কেটে পড়ে থাকা একটি কড়ইগাছ কাটছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। কিছু কাটা গাছ সেখানে ট্রাকে তোলা হচ্ছিল। সেখানে জেলা পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে পাওয়া যায়নি। সেখানে ছিলেন ঠিকাদারের প্রতিনিধি মামুন আলী। তিনি অতিরিক্ত গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

    তিনি বলেন, ১০ দিন ধরে তাঁরা গাছ কাটছেন। হঠাৎ করে গাছকাটা বন্ধ রাখা হয়েছে। তার দাবি বৈধভাবে জেলা পরিষদের কাছে তিনি টেন্ডার নিয়ে গাছগুলো কাটছেন।

    স্থানীয় সমাজসেবক কাজী নজরুল বলেন,তীব্র তাপদাহে যখন গাছ রোপন করার কথা বলছে সরকার। তখন তাজা-তাজা রাস্তার দুই ধারের গাছগুলো কাটা হচ্ছে। জেলা পরিষদের এতোই কি টাকার অভাব হয়ে গেছে? যে এভাবে তাজা গাছগুলো কাটার জন্য টেন্ডার দিয়েছে। আর সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কথা বলে এভাবে অল্প একটু ড্রেন করার কথা বলে শত শত গাছ কাটছে। তাও আবার রাস্তার দুই ধারের গাছ। এটার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এটার দাবি জানাচ্ছি। আর দ্রুত গাছ কাটা বন্ধ করা হোক।

    সড়ক ও জনপথ বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদি খান বলেন, ২৫০ মিটার নালা নির্মাণের জন্য চার-পাঁচটি গাছ কাটার প্রয়োজন ছিল। এ জন্য পাঁচ-ছয় মাস আগে মৌখিকভাবে জেলা পরিষদকে জানিয়েছিলেন। গাছগুলো ৪০ থেকে ৫০ বছরের পরিপক্ব। পরে এগুলোয় পচন ধরবে। তখন দাম পাওয়া যাবে না।

    এ ছাড়া বিক্রি করা গাছের মধ্যে মরা গাছ, বিদ্যুতের লাইনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ গাছও রয়েছে। খরতাপের কথা বিবেচনা করে পাঁচ-ছয় দিন থেকে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রাখা হয়েছে।

    গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওই এলাকায় রাস্তার পাশে ড্রেন করবে। সে জন্য গাছ কেটে নিতে আমাদের চিঠি দেয়। তাই তাজা হলেও গাছগুলো কেটে নিতে হচ্ছে। তাছাড়া,অতিরিক্ত গাছ কাটার সুযোগ নেই। আমাদের প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত থাকে। সেখানে কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি জানালে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ছুটির জন্য হয়তো ছিল না।’

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…