আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম, রক্ত, মৃত্যু, লক্ষ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এই দিন বাংলার আকাশে স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়। তাই বাঙালি জাতির কাছে দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। এ দিন সরকারি ভাবে বীর শহিদের শ্রদ্ধা জানানো হয় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। এছাড়াও দেশের সর্বস্তরের জনগন বীর শহিদদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানায়। মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে গণপূর্ত অধিদপ্তর ৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধস্থল প্রস্তত করার কাজ হাতে নেয়। ইতিমধ্যে জাতির শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে স্মৃতিসৌধ এলাকায় চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রসাশন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, বাহারি ফুলের সমারোহে সাজিয়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধের পুরো অঞ্চল। লাল ইটে সাদা রঙের ছোঁয়া শুভ্রতা ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে লাল টবে শোভা পাচ্ছে বাহারি ফুলগাছ। লেকের পানিতে নতুন করে রোপণ করা হয়েছে লাল শাপলা।
এসময় ফুলের চারা রোপন করা শ্রমিক মোঃ মতিন মিয়ার সাথে কথা হয়। তিনি জানান, সামনে মহান বিজয় দিবস, এদিন মহান রাষ্ট্রপতি, প্রদান উপদেষ্টাসহ অনেকেই এখানে আসবে। তাই আমরা ফুল গাছ রোপন করে সৌন্দর্য বর্ধণের কাজ করিতেছি। এ কাজ করে আমরা অনেক আনন্দ পাই।
এছাড়া জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা ধুয়ে মুছে রং তুলির আঁচড়ে সাজানো হয়েছে। গত ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয় স্মৃতিসৌধের ধোয়া মোছা ও রংয়ের কাজ। সৌন্দর্য বর্ধনে বিভিন্ন জাতের ফুলের চারা রোপন, লাইটিং সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ বর্ণিল আয়োজনে প্রস্তুত করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে। রংতুলির দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বেদিসংলগ্ন সিঁড়িগুলো। সবুজ ঘাসের গালিচা কেটেছেঁটে নান্দনিক করে তোলা হয়েছে। পুরোনো ফুলের গাছগুলোকে পরিচর্যা করার পাশাপাশি রোপণ করা হয়েছে নানা জাতের ফুলের গাছ। ভবনের দেয়ালে ঝোলানো হয়েছে বর্ণিল আলোকবাতি।
আলোকসজ্জা কাজে নিয়োজিত এক ইলেকট্রিক মিস্তিরি জানান, বেশ কিছু দিন আমরা কাজ করছি। কাজ প্রায় শেষের দিকে। ১৬ ডিসেম্বরে এখানে হাজার হাজার লোক আসে। তাই এখানে কাজ করে আমাদের খুব ভালো লাগে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যেই স্মৃতিসৌধ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছেন।
চার স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা।
এ উপলক্ষে শনিবার সকালে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর শহিদের আত্মত্যাগের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টাসহ যারা শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। ফ্যাসিস্ট ছাড়া, সর্বস্তরের মানুষ এবার জাতীয় স্মৃতিসৌধের শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। আর এদের নিরাপত্তার জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে বিভিন্ন সাদা পোশাকের পাশাপাশি থাকছে পোশাকদারি পুলিশও।
গণপূর্ত বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার খান জানান , মাননীয় রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্যগণ ছাড়াও, মহান বিজয় দিবসে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও নানা সংগঠন,বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের ঢল নামবে সাভারের জাতীয় স্মৃতসৌধে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধকে সম্পূর্ণ রূপে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানালেন গণপূর্ত বিভাগের এই কর্মকর্তা।
মহান বিজয় দিবসে ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে নাম না জানা লাখো শহিদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কূটনৈতিক কোরের ডিন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া হবে তিন বাহিনীর গার্ড অব অনার।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে জনসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ ফটক খুলে দেওয়া হবে। তখন দেশের সকল রাজনৈতিক দলে জাতীয় নেতৃবৃন্দ, সামাজিক ও সংস্কৃতি সংগঠন নিজ নিজ ব্যানারে তাদের কর্মি সমর্থকদের নিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এদিন সারাদেশ থেকে সাধারণ মানুষের ঢল নামবে জাতীয় স্মৃতিসৌধস্থলে। দেশের মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় মহান বিজয় দিবসে উৎসবমুখর হয়ে উঠবে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা।
এসআর