এইমাত্র
  • বোমা হামলায় রাশিয়ার সেনাবাহিনীর জেনারেল নিহত
  • প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক
  • বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা নয়, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে গণঅধিকার পরিষদ
  • ২৭ ডিসেম্বর ভোটার হবেন তারেক রহমান
  • এই মুহূর্তে কোন বাংলাদেশে আছি জানি না: মির্জা ফখরুল
  • ঢাকা-১০ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন আসিফ মাহমুদ
  • হাদির হত্যাকারীর প্রকৃত অবস্থান জানলে ধরেই ফেলতাম: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • হাদি হত্যার বিচার ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে : আইন উপদেষ্টা
  • `সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলায় সরকারের ভেতরের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে'
  • খালাস চেয়ে সাবেক আইজিপি মামুনের আপিল
  • আজ সোমবার, ৮ পৌষ, ১৪৩২ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    সীমানা ছাড়িয়ে মানবিকতা

    অন্য জেলার রোগী, তবু পাশে দাঁড়ালেন চট্টগ্রামের ডিসি জাহিদুল

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম

    অন্য জেলার রোগী, তবু পাশে দাঁড়ালেন চট্টগ্রামের ডিসি জাহিদুল

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম

    প্রশাসনের দায়িত্ব কেবল ফাইল-নথি আর নির্দেশনাতেই সীমাবদ্ধ নয়, মানুষের জীবন ও মানবিকতার প্রশ্নে একজন প্রশাসকের ভূমিকা কতটা গভীর হতে পারে, তার উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করলেন নবাগত চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এক অসহায় বিধবা নারী, রাজিয়া বেগমের জীবন বাঁচাতে জেলার সীমানা উপেক্ষা করে যে মানবিক সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন, তা ইতোমধ্যে প্রশাসন ও স্বাস্থ্যখাতে প্রশংসার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

    টেকনাফ উপজেলার ১নং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাসিন্দা রাজিয়া বেগম একজন বিধবা নারী। স্বামীর মৃত্যুর পর সীমাহীন দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্যেই চলছিল তাঁর জীবন। এরই মধ্যে ভয়াবহ আঘাত হয়ে আসে কিডনি বিকলের মতো জটিল রোগ। চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন, রাজিয়ার দুটি কিডনিই সম্পূর্ণ অকার্যকর। সপ্তাহে অন্তত তিনবার নিয়মিত ডায়ালাইসিস না হলে তাঁর জীবন হুমকির মুখে পড়বে।

    কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো, পর্যটননগরী কক্সবাজার জেলায় আজও সরকারিভাবে কিডনি ডায়ালাইসিসের কোনো পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা নেই। ফলে রাজিয়ার পরিবারকে নির্ভর করতে হয় বেসরকারি হাসপাতালের ওপর, যেখানে প্রতিবার ডায়ালাইসিসে গুনতে হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। একজন দরিদ্র বিধবা নারীর পরিবারের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা কার্যত অসম্ভব।

    নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে না পারায় রাজিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। শরীরে জমে যায় বিষাক্ত বর্জ্য, দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা ও জীবননাশের আশঙ্কা। পরিবারে তখন আর কোনো উপায় ছিল না। শেষ আশ্রয় হিসেবে এগিয়ে আসেন তাঁর ছোট ভাই, কলেজ ছাত্র ওমর ফারুক।

    গত ৯ ডিসেম্বর নিরুপায় হয়ে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন ওমর ফারুক। তাঁর লক্ষ্য একটাই, যেভাবেই হোক বোনের জীবন বাঁচাতে সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা। একাধিক সূত্রে তিনি জানতে পারেন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কারণে ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন।

    আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনিক প্রস্তুতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও দাপ্তরিক কাজে যখন জেলা প্রশাসক চরম ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়ই ফারুক সাক্ষাৎ করেন তাঁর সঙ্গে। পুরো ঘটনা মনোযোগ দিয়ে শোনেন জেলা প্রশাসক। রোগীর অবস্থা, অর্থনৈতিক সংকট ও চিকিৎসার বাস্তবতা বুঝে তিনি কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

    জেলা প্রশাসক দ্রুত জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত সুপারিশ প্রদান করেন, যাতে রাজিয়া বেগম সরকারি চিকিৎসা সুবিধার আওতায় আসতে পারেন।

    এই সুপারিশ নিয়ে ওমর ফারুক যোগাযোগ করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিটে। জেলা প্রশাসকের সুপারিশপত্রের ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত রাজিয়ার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করার পর সরকারি বিধি অনুযায়ী এককালীন ২০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার শর্তে ডায়ালাইসিস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

    সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সরকারি ব্যবস্থায় প্রতিবার ডায়ালাইসিসে রাজিয়ার খরচ হবে মাত্র ৫০০ টাকা, যা বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় প্রায় বারো গুণ কম।

    রবিবার (২১ ডিসেম্বর) আবারও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ওমর ফারুক। বোনের চিকিৎসা ও প্রাথমিক ব্যয় নির্বাহের জন্য আর্থিক সহায়তার আবেদন জানালে জেলা প্রশাসক মুহূর্তের মধ্যেই তাঁকে সহায়তা প্রদান করেন।

    তিন দফা সাক্ষাৎ এবং ধারাবাহিক সহযোগিতা পেয়ে আবেগাপ্লুত ওমর ফারুক সময়ের কন্ঠস্বর-কে বলেন, “আমার বোন অন্য জেলার বাসিন্দা, এই বিষয়টি স্যার কখনোই বিবেচনায় নেননি। তিনি একজন ডিসি হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ব্যস্ততার মাঝেও তিনি দীর্ঘ সময় ধরে আমার কথা শুনেছেন।”

    চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রুমা ভট্টাচার্য জানান, “জেলা প্রশাসক মহোদয়ের রেফারেন্স দেওয়া রোগীর আবেদনটি অনুমোদন করা হয়েছে। আবেদনে দেওয়া নম্বরে ইতোমধ্যে ডায়ালাইসিস ইউনিট থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত অর্থ ব্যাংকে জমা দিয়ে আগামী ছয় মাসের জন্য ডায়ালাইসিস ইউনিটে ভর্তি হতে পারবেন। ছয় মাস পর নিয়ম অনুসারে নবায়নের সুযোগ রয়েছে।”

    চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, “এটি একজন প্রশাসকের দায়িত্ববোধের বাইরে গিয়েও মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ। রোগী কোন জেলার বাসিন্দা, তা নয়, একজন মানুষের জীবনই এখানে মুখ্য ছিল। আমাদের হাসপাতালও একই নীতিতে পরিচালিত হয়, রোগীর চিকিৎসাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”

    এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে যদি কোনো অসহায় নাগরিকের জীবন বাঁচানোর সুযোগ আসে, তাহলে মানুষ হিসেবে পাশে দাঁড়ানোই আমার দায়িত্ব বলে মনে করি।”

    এইচএ

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…