ভোরের ঘড়িতে তখন ছয়টা বাজে। দিনের আলো আসার কথা থাকলেও দিনাজপুর যেন আলো পেতে দেরি করছে। চারদিক ঘন কুয়াশায় মোড়ানো। রাস্তার ধারের গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি কিংবা চলন্ত মানুষের অবয়ব সবই যেন অস্পষ্ট রেখায় আঁকা কোনো দৃশ্য। হিমেল বাতাস শরীর ছুঁয়ে দিলে বোঝা যায়, শীত আজ আর নরম নয় সে কঠোর হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে।
কুয়াশা কিছুটা পাতলা হলেও ঠান্ডার চাপ ছিল স্পষ্ট। সকালের সড়কগুলো ছিল অস্বাভাবিকভাবে নীরব। যেখানে প্রতিদিন মানুষের ব্যস্ত পদচারণা থাকে, সেখানে আজ শূন্যতা। অনেক দোকান সময়মতো খোলেনি। হাটবাজারে ক্রেতা কম, রিকশাগুলো দাঁড়িয়ে আছে যাত্রীর অপেক্ষায়। যারা বাইরে বের হয়েছেন, তারা শরীর ঢেকে রেখেছেন মোটা চাদর, গলায় মাফলার, মাথায় টুপি। কোথাও কোথাও আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চলছে।
এই ঠান্ডা সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষদের। কাজের প্রয়োজন থাকলেও ভোরের শীতে ঘর ছাড়তে কষ্ট হচ্ছে। আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা ভর করছে অনেকের মনে।
খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের উত্তর কাচিনিয়া এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, “ভোরে ঠান্ডা এতটাই তীব্র থাকে যে বাইরে বের হতে মন চায় না। কিন্তু কাজ না করলে সংসার চলে না এই দ্বন্দ্বেই দিন শুরু হয়।
একই উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের নেউলা গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজার রহমান ও ইসমাইল হোসেন জানান, কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের কারণে সকালের কাজ শুরু করতেই দেরি হচ্ছে। এতে কৃষিকাজের গতি কমে যাচ্ছে।
আবহাওয়ার পরিস্থিতি নিয়ে দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, উত্তরাঞ্চলে শীত ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে। আগামী কয়েকদিন রাত ও ভোরে তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে শৈত্যপ্রবাহ বা শৈত্যপ্রবাহ সদৃশ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
দিনাজপুরের এই সকাল শুধু আবহাওয়ার খবর নয়। এটি অপেক্ষার গল্প, সহ্যশক্তির গল্প। কুয়াশার ভেতর দিয়ে জীবনের চাকা ঘোরানোর নিরব চেষ্টা। শীতের কামড়ের মধ্যেও মানুষ আশায় থাকে সূর্যের উষ্ণ আলো একসময় ঠিকই কুয়াশা ভেদ করে আসবে।
এসআর