যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তীব্র শীতকালীন তুষারঝড় ও বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কায় অবকাশকালীন মৌসুমে হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘ফ্লাইটঅ্যাওয়্যার’-এর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১ হাজার ৬০০টি ফ্লাইট সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে এবং ৭ হাজার ৪০০টিরও বেশি ফ্লাইট সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে বিলম্বিত হয়েছে।
দেশটির ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে শীতকালীন ঝড়ের উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে যে, নিউ ইয়র্ক এবং দক্ষিণ কানেকটিকাট অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৯ ইঞ্চি বা প্রায় ২৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারী তুষারপাত হতে পারে, যা জনজীবনকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, এই বৈরী আবহাওয়ার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে নিউ ইয়র্ক এলাকার জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নিউয়ার্ক লিবার্টি এবং লাগার্ডিয়া বিমানবন্দরে। এ ছাড়া বোস্টন, শিকাগো এবং প্রতিবেশী দেশ কানাডার টরন্টো শহরেও তুষারঝড়ের কারণে বিমান চলাচল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বড় বড় এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে জেটব্লু ২২৯টি, ডেল্টা ২৪১টি এবং রিপাবলিক এয়ারওয়েজ ১৮০টি ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। সাউথওয়েস্ট, আমেরিকান এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সও তাদের শত শত পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল করেছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাত্রীদের অনুরোধ জানিয়েছে যে, তারা যেন বিমানবন্দরে আসার আগে অবশ্যই নিজ নিজ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্লাইটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
তুষারপাতের তীব্রতা স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল এক জরুরি বার্তায় নাগরিকদের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে, যদি একান্তই ঘর থেকে বের হতে হয় তবে যেন আগে থেকে পরিকল্পনা করা হয় এবং রাস্তায় ধীরে গাড়ি চালিয়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখা হয়।
নিউ জার্সি ও কানেকটিকাটের গভর্নররাও একই ধরনের সতর্কবার্তা জারি করেছেন। চালকদের বিপজ্জনক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে গাড়িতে জরুরি সরঞ্জামের কিট রাখার বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চলতি মৌসুমে নিউ ইয়র্ক সিটির জন্য এটি দ্বিতীয় বড় ধরনের তুষারপাত হতে যাচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমগুলো উল্লেখ করেছে। এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর কয়েক ইঞ্চি তুষারের চাদরে শহরটি ঢাকা পড়েছিল। নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস চাকরিজীবীদের আগেভাগে অফিস থেকে বের হওয়ার অথবা বাড়ি ফেরার সময় গণপরিবহন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
রাস্তায় দুই ইঞ্চির বেশি তুষার জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ ‘স্নো-প্লাউ’ বা তুষার অপসারণকারী যন্ত্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অবকাশ যাপনের এই ব্যস্ত সময়ে এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয় পর্যটন ও যাতায়াত ব্যবস্থায় বিশাল আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইখা