এইমাত্র
  • মেঘনা থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার
  • যে বুট পায়ে ২০২৬ বিশ্বকাপ মাতাবেন মেসি
  • দর্শনায় ১৪ ভারতীয়কে পুশব্যাক
  • কক্সবাজার-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সালাউদ্দিন আহমদ
  • ভোলায় ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৩
  • যুব বিশ্বকাপের দল ঘোষণা ভারতের
  • দল ছাড়লেন এনসিপির আরেক নেতা
  • জীবননগরে শীতকালীন সবজিতে স্বস্তি ফিরেছে বাজারে
  • ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রথম নারী এমডি নুজহাত আনোয়ার
  • ২১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে বড় ব্যর্থতা, নকশার ত্রুটি, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক
  • আজ রবিবার, ১৪ পৌষ, ১৪৩২ | ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল

    ২১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে বড় ব্যর্থতা, নকশার ত্রুটি, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক

    এলেন বিশ্বাস, উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫২ পিএম
    এলেন বিশ্বাস, উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫২ পিএম

    ২১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে বড় ব্যর্থতা, নকশার ত্রুটি, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক

    এলেন বিশ্বাস, উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫২ পিএম

    হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে একের পর এক সমস্যা উঠে আসছে। প্রকল্পটি যখন উদ্বোধনের প্রায় পথে, তখনই ধরা পড়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাভারেজের অনুপস্থিতি। এই নকশাগত ত্রুটি শুধু যাত্রীসেবাকে ব্যাহত করছে না, বরং সরকারের কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

    বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সূত্রগুলো জানাচ্ছে, টার্মিনাল নির্মাণের ৯৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও এই বিপুল সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বমানের এই টার্মিনালে যাত্রীরা মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারবেন না- এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু এখন এই সমস্যা সমাধানে সিলিং খুলে নতুন করে ক্যাবল স্থাপন করতে হবে, যা বাজেটের বাইরে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করবে।

    সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো অভিযোগ করছে, মূল নকশায় মোবাইল নেটওয়ার্কের 'ইন-বিল্ডিং সলিউশন' সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছিল। এই ত্রুটি যদি নির্মাণকাজের শুরুতেই ধরা পড়ত, তাহলে অতিরিক্ত ব্যয় এড়ানো যেত। কিন্তু কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে এই সমস্যা সামনে আসায় এখন জরুরি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে বেবিচক।

    বেবিচকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন যে, থার্ড টার্মিনালটি স্থাপত্যগতভাবে অত্যন্ত সুন্দর এবং বিশ্বের যেকোনো আধুনিক বিমানবন্দরের সাথে তুলনীয়। কিন্তু কয়েকটি গুরুতর ত্রুটি এই সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, "এত বড় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকাটা বড় ধরনের অবহেলা। ক্যাবলগুলো সিলিংয়ের ভেতর দিয়ে নিতে হবে, ফলে ভাঙা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এতে কমপক্ষে এক কোটি টাকা গচ্চা যাবে।”

    গত মাসে এই পরিস্থিতি নিয়ে বেবিচক বোর্ডের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. হুমায়রা সুলতানা এবং বোর্ডের অন্যান্য সদস্যগণ।

    বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, টেলিটকের সঙ্গে চুক্তি করে দ্রুত মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। টেলিটকই একমাত্র মোবাইল অপারেটর যে কার্যকর প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা টার্মিনালে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক স্থাপন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং অন্যান্য অপারেটরদেরও যুক্ত করবে। প্রাপ্ত আয়ের একটি অংশ নিয়মিতভাবে বেবিচককে প্রদান করা হবে।

    প্রাথমিকভাবে ৫ বছরের জন্য চুক্তি হবে এবং প্রতি দুবছর পর পর চুক্তি পর্যালোচনা করা হবে। সন্তোষজনক বিবেচিত হলে চুক্তি নবায়ন করা হবে এবং নবায়নের ক্ষেত্রে বার্ষিক ভাড়া ২.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।

    সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নকশা সংশোধনের কাজ শুরু হওয়ার পর আরো ছয় থেকে সাত মাস সময় লাগবে কাজ শেষ হতে। এই বিলম্বের ফলে যাত্রীদের কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হবে এবং প্রকল্পের মোট ব্যয় আরো বাড়বে।

    বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, "টার্মিনালে আরো কিছু ত্রুটি আছে যা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের।" এই স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যায়, শুধু মোবাইল নেটওয়ার্কই নয়, টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও নান্দনিক নকশায়ও অনিয়ম রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

    ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এই বিপুল অর্থায়ন করেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।

    প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন এবং সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের আন্তর্জাতিক মানের স্থপতিরা। নির্মাণকাজ করছে জাপানের সিমুজি ও কোরিয়ার স্যামসাংয়ের যৌথ উদ্যোগ এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)। এত বড় বিনিয়োগ এবং অভিজ্ঞতাময় প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পৃক্ততা সত্ত্বেও এই ধরনের ত্রুটি কেন দেখা দিল, তা এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    বেবিচকের সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিদর্শন) সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, যাত্রীসেবা উন্নয়ন, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা এবং অপারেশনাল স্বার্থে দ্রুত মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। আধুনিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের স্মার্টফোন ব্যবহার, অনলাইন চেক-ইন, বোর্ডিং গেটের তথ্য প্রাপ্তি এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক অপরিহার্য।

    বিটিআরসি, মোবাইল অপারেটর, টাওয়ার কোম্পানি এবং ইন্টিগ্রেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক শুধু জায়গা ভাড়া দিতে রাজি হলেও কোনো রাজস্ব শেয়ার বা সমন্বিত প্রস্তাব দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে টেলিটকের প্রস্তাবই একমাত্র কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

    বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাওছার মাহমুদ জানিয়েছেন, মোবাইল নেটওয়ার্কের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করা হচ্ছে। তবে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে নতুন প্রকল্পগুলোতে নকশা পর্যায়ে আরো ব্যাপক পর্যালোচনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বড় প্রকল্পে একটি মৌলিক সুবিধা বাদ পড়া অত্যন্ত দুঃখজনক। নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পরও এই ত্রুটি ধরা পড়ায় প্রশ্ন উঠছে তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ভুল এড়াতে প্রকল্পের প্রতিটি পর্যায়ে আরো দক্ষ ও সচেতন পরিদর্শন ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।

    এখন দেখার বিষয়, টেলিটকের সাথে চুক্তির পর কত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয় এবং যাত্রীরা কবে নাগাদ এই আধুনিক টার্মিনালের সেবা উপভোগ করতে পারেন।

    ইখা

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…