শরীয়তপুরে তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) শরীয়তপুরের তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই। তীব্র তাপপ্রবাহ ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। ফলে বছরের বেশিরভাগ সময়ই এই জেলায় বিপজ্জনক মাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে।
বৃষ্টিপাত কম হওয়ার ফলে এই মৌসুমেও স্বাভাবিক হচ্ছে না শরীয়তপুরের তাপমাত্রা। একসময় এখানে ছিল পর্যাপ্ত গাছপালা ও ঝোপঝাড়। এগুলো এখন প্রায় নিঃশেষ। এতে প্রভাব পড়েছে জনজীবনে।
অতিরিক্ত গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে শরীয়তপুরের জনজীবন। মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। পেটের তাগিদে কাজের ও ব্যবসার জন্য মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই বসে থাকছেন ঘরেই। স্থবিরতা নেমে এসেছে প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষের মাঝে।
আর এই তাপদাহের ফলে বেশ বিপাকে পড়েছেন শরীয়তপুরের বোরো ধান চাষীরা। অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা পারছেন না পাকা ধান কাটতে। তাই বাধ্য হয়ে ধান কাটার সময় হিসেবে রাতের বেলা বেছে নিয়েছেন জেলার অনেক চাষী।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শরীয়তপুরে কৃষিশ্রমিকের সংকট চরমে পৌঁছেছে। গত কয়েক দিন ধরে বোরো জাতের ধান পাক ধরায় কৃষকরা কাটা শুরু করেছেন। গরমের কারণে কৃষি শ্রমিকের অভাবে তারা ধান তুলতে পারছেন না।
ইতিমধ্যেই ধানের পাক ধরেছে। কিন্তু কৃষিশ্রমিকের সংকটের কারণে ধান কেটে ঘরে আনতে পারছেন না। আগে যেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় শ্রমিক পাওয়া যেত এখন তীব্র গরমের কারণে এখন ৮০০ টাকা মজুরি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। সময়মতো ধান ঘরে তুলতে না পারলে ফলন কম হবে।
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কৃষকরা মাঠে বেশি সময় কাজ করতে পারেন না। ধান ক্ষেত এমনিতে গরম থাকে আর অতিরিক্ত গরমের কারণে কৃষকরা বেশি সময় ধরে কাজ করতে পারেন না। অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়ে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অতিরিক্ত কষ্টের কারণে তারা এখন আর মাঠে কাজ করতে চান না। শ্রমিকের অভাবে তাই চরম সংকটে পড়েছেন চাষিরা। এই জন্য বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে স্থানীয় চাষিররা। তারা এখন দিনে বাড়িতে থাকবে রাতে চাদের আলোতে ধান কাটবে বলে জানিয়েছে শরীয়তপুরে স্থানীয় কৃষকরা।
শরীয়তপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলায় ২৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫৮৫ হেক্টর, নড়িয়া উপজেলায় ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর, জাজিরা উপজেলায় ১ হাজার ১৫১ হেক্টর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ডামুড্যা উপজেলায় ৩ হাজার ৮২১ হেক্টর ও গোসাইরহাট উপজেলায় ৪ হাজার ৮৯৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছর জেলায় আবাদ করা হয়েছিলো ২৫ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছিলো ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন বেড়েছে ৩৩৬ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে জেলায় বোরোধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন। তবে একটানা চলা প্রচন্ড তাপদাহে ধানের উৎপাদনে কিছুটা ব্যঘাত ঘটবে বলে ধারণা করছে কৃষিবিভাগ।
সদর উপজেলার চর কাশাভোগ এলাকার চাষি মিজান শিকদার জানান, ভোরে মাঠে গিয়ে ধানের জমিতে কাজ শুরু করতেই সূর্য উঠছে। সূর্যের তাপে গরমে শরীর ঘেমে যাচ্ছে। বেশি সময় মাঠে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত তাপের কারণে ধান গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। জমিতে পানি জমিয়ে রাখলেও শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই ৪ জন কৃষাণ নিয়ে চাঁদের আলোকে সঙ্গী করে ধান কাটা শুরু করেন। রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে এ ধান কাটা। এতে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে তার।
আংগারিয়া এলাকার ধানচাষী আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি রাতের বেলায় কৃষান নিয়ে ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটার কাজ শুরু করেছি। মূলত দিনের বেলা হিটস্ট্রোকের ভয়ে অনেকেই ধান কেটে দিতে রাজি হয়নি। পরে রাতের বেলা ধান কাটা শুরু করি। রাতের বেলা জমিতে যেমন বাতাস থাকে তেমনি ঠান্ডাও থাকে। আমি মনে করি এই সময়ে রাতেই ধান কাটার উপযুক্ত সময়।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহে আমাদের কৃষকদের দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। তাই যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।