চুয়াডাঙ্গায় ১৬ দিন ধরে অব্যহত রয়েছে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপমাত্রা। এখানে বাতাসে বইছে আগুনের হল্কা।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) বেলা ৩টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস চুয়াডাঙ্গার রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৪৮ শতাংশ।
বাতাসে জলীয় বাষ্পেন পরিমাণ অনেক বেশী থাকায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে বলে জানান চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান। আর এই দাবদাহে সবচাইতে বেশি বিপাকে পড়েছে দিন মজুর খেটে খাওয়া রিক্সা ভ্যান চালকরা।
হিট স্ট্রোকের ঝুকি মাথায় নিয়ে ইটের খোয়া ভাঙ্গার মেশিনে দুপুর রোদে কাজ করা দিন মজুর হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী শ্রীমতি তুলুমতি বলেন, কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না। আমাদের মত মানুষদের মরনের ঝুকি মাথায় নিয়েই শীত গরমে কাজ করতে হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদরের তালতলা পশুহাট পাড়ার ভ্যান চালক আব্দুর রহমান (৬০) জানান, রোদ গরমে কোন রাস্তা ঘাটে বাজারে কোন লোক না থাকায় দিনের বেলা কোন প্যাসেঞ্জার পাচ্ছি না। তাছাড়া এই রোদ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয়ে ভাড়া মারতেও ভয় পাচ্ছি।
আলোকদিয়া গ্রামের বৃদ্ধ রিক্সা চাকল ভুনা (৭৫) জানান, রোদ গরম পড়লেও কি আমি ঘরে বসে থাকতে পারবো? পারবো না। ঘরে বিয়ে দারি দুটো মেয়ে আছে টাকার অভাবে তাদের বিয়ে দিতে পারেনি। এখন দুবেলা দু মুঠো ভাতের ব্যবস্থা না করতে পারলে বাড়ির সবাই না খেয়ে থাকবে। বৃদ্ধা বউ আর মেয়েদের মুখের দিকে চেয়ে নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে এই রোদ গরমে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি।
চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডে অটোরিক্সা নিয়ে গাছের ছায়ায় বসে থাকা অটোচালক জাহাঙ্গীর বলেন, প্রচন্ডো রোদ গরমে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। মানুষ বের না হলে ভাড়া মারবো কি ভাবে। তাই বসে অলস সময় কাটাচ্ছি। অতি গরমের কারনে মানুষ রাস্তায় কম বের হচ্ছে। এজন্য আমাদের ভাড়া হচ্ছেনা।
এদিকে অতি তীব্র তাপদাহে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ। পানির স্থর নিচে নেমে যাওয়ায় চুয়াডাঙ্গা অধিকাংশ গ্রামে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। আবার পানি দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না মাঠের সবজি আবাদ। শুকিয়ে যাচ্ছে সড়কের ধারের নিমসহ বিভিন্ন ফলজ ও বোনজ গাছসহ গাছের পাতা।
চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়ে আসছে এই জেলায়। একটানা ১৫ দিন তীব্র থেকে অতিতীব্র দাবদাহে হাসপাতালে বেড়েই চলেছে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও চিকিৎসক রয়েছে ১০০ শয্যার হাসপাতালের অর্ধেক। সামান্য এই জনবল নিয়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তাররা। গরম জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন শতাধিক রোগী। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় রোগীরা হাসপাতালের বারান্দা ও করিডোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া আউটডোরে শাত শত গরমজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। আর এ রোগে আক্রান্তের বেশীর রোগীই শিশু ও বৃদ্ধ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৫৫ শতাংশ। দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এসময় বাতাসে আদ্রতার পরিমান ছিলো ১৬ শতাংশ। সূর্যের এ চোখ রাঙ্গানি আরও বেডে যায় বেলা ৩ টায়। এসময় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ১১ শতাংশ।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, গত প্রায় ১৬ ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
আজ শনিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩২ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৭০ শতাংশ। দুপুর ১২ চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ডিগ্রী সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ২২ শতাংশ। বেলা ৩ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্র ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৪৮ শতাংশ। বাতাসে জলীয় বাষ্পেন পরিমাণ অনেক বেশী থাকায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।
তিনি আরেও জানান, জেলায় হিট এলার্ট জারী আছে। আজ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রার পারদ সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রীতে উঠা নামা করছে। এপ্রিল মাস জুড়েই এ অবস্থা থাকবে। তাপমাত্রা আরও বাড়বে। সকলকে সাবধানে থাকার অনুরোধ রইলো।
এআই