এইমাত্র
  • ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক
  • বেসরকারি ফলে জয়ী হলেন যারা
  • বেসিস নির্বাচনে বিজয়ী হলেন যারা
  • দেশে কোনো গাধা নেই, তবুও পালিত হচ্ছে বিশ্ব গাধা দিবস
  • গাজা সংকট নিয়ে কুয়েতের আমিরকে যা জানালেন এরদোগান
  • পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক: বিআরইবি
  • গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
  • মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগ মুহূর্তে ছেলের খুনিকে ক্ষমা করলেন বাবা
  • সীমান্তে হত্যার ঘটনা দুঃখজনক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
  • ৪৬তম বিসিএস: প্রিলির ফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ বৃহস্পতিবার
  • আজ বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৯ মে, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে বেপরোয়া গরু চোরাচালান চক্র

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম
    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম

    ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে বেপরোয়া গরু চোরাচালান চক্র

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম

    কক্সবাজারের রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে নিয়মিত প্রবেশ করছে গরু। রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, ডাকাত এবং ব্যবসায়ীরা এসব গরু চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে উভিযোগ উঠেছে। পাহাড়ে অবস্থান করা ডাকাত দলের পাহারায় এসব গরু সীমান্ত পার হয়ে পৌঁছে যায় গন্তব্যে। এতে মিলছে কাড়ি কাড়ি টাকা। ফলে, চোরাচালানে যোগ দিচ্ছেন শ্রমজীবী, বেকারসহ অপরাধীরা। এসব টাকার ভাগ যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও।

    গরু চোরাচালানের টাকার ভাগকে কেন্দ্র করে ডাকাত দলের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে বাবা ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন, স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালেব, জাফর আলম এবং তার ছেলে সেলিম।

    এসব ঘটনায় পৃথক মামলা হলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এতে একদিকে যেমন অপরাধ বাড়ছে, তেমনি সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। সীমান্তে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে গরু চোরাচালান বন্ধের পাশাপাশি ডাকাত দলের সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

    সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন কয়েক’শ গরু অবৈধভাবে বাংলাদেশে সরবরাহ করছে চোরাকারবারি চক্র। বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ির ফুলতলা, লেবুছড়ি, চাকঢালাসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আনা এসব গরু বুঝে দেয়া হয় গর্জনিয়া পাহাড়ের শীর্ষ ডাকাত হিসেবে পরিচিত, ডজন মামলার পলাতক আসামি শাহীন গ্রুপকে।

    শাহীন তার বাহিনী দিয়ে এসব গরু ফুলতলা, লেবুছড়ি হয়ে ব্যঙডেবা, থোয়াইঙ্গাকাটা, মাঝিরকাটা এবং বড়বিল হয়ে বাইশারি সীমান্ত কিংবা জোয়ারিয়ানালা পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। আবার বাইশারী সীমান্ত দিয়ে কালিরছড়া, ঈদগাঁও পর্যন্ত পৌঁছে দেয় শাহীন বাহিনীর এক সময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড আবছার ডাকাত এবং ঈদগড়ের রুস্তম ডাকাত ওরফে রুস্তম মেম্বার। পরে এসব গরু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিটি গরুর পেছনে ৮-১০ হাজার টাকা পায় ডাকাত দল। যেখানে দিনমজুর থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়।

    অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এসব গরু চোরাচালানের সঙ্গে ঢাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের সঙ্গে নাম উঠে এসেছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন ও তার ভাই আব্দু শুক্কুরের। প্রথমদিকে সাদ্দামের হয়ে মাঠে কাজ করতেন ছাত্রলীগ নেতা ইমাদ সিকদার, শাকিল আদনান, তারেক উদ্দিন মিশুক। এখন তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন সোহেল সিকদার, শাহজাহান সিরাজ শাকিল ওরফে শাকিল মেম্বার এবং ডাকাত সর্দার শাহীন।

    ব্যবসায়ী হিসেবে আরও যাদের নাম সামনে এসেছে তারা হলেন, কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জসিম উদ্দিন, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজরুল, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জসিম উদ্দিন, নাইক্ষ্যংছড়ি রূপনগর এলাকার বাসিন্দা ও যুবদল নেতা আনোয়ার ইসলাম রাশেল, গর্জনিয়া বাজার সমিতির সভাপতি এরশাদ উল্লাহ, ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক নেতা জহিরুল ইসলাম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন আরফাত রিশাদ, মাদকের বিভিন্ন মামলার আসামি জহির উদ্দিন, মো. আলী ওরফে মাতালি, নজরুল ইসলাম।

    অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, সীমান্ত পারাপারের পর পাহাড়ি যেসব পথ দিয়ে গরু পাচার করা হয় সেখানে রাতজেগে পাহারা বসিয়েছে পুলিশ। থোয়াইঙ্গাকাটা এলাকায় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেন কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি তিতারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন এবং বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া সপ্তাহে যে দুইদিন গর্জনিয়া বাজার বসে সেদিন এসব সোর্সদের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেন জামায়াত নেতা বেলাল সিকদার। পুলিশের হয়ে টাকা উত্তোলন করেন সোহেল নামে আরেক যুবক। তার সঙ্গে থাকেন পুলিশ সদস্য আজমির।

    গেল রমজানে টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বাহিনী প্রধান শাহীনের সঙ্গে তার সেকেন্ড ইন কমান্ড আবছারের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর আলাদা বাহিনী গড়ে তুলে আবছার। পরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৮ এপ্রিল রমজান থোয়াইঙ্গাকাটা এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

    এতে আবছার বাহিনীর সদস্য আবু তালেব নিহত হন। এ ঘটনার পর আবছার ঈদগড় ও আশেপাশের এলাকা থেকে লোক নিয়ে নিজের বাহিনীর আকার বৃদ্ধি করেন। এরপরই শাহিনী বাহিনীর উপর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে আবছার গ্রুপ। এরই জেরে ২১ এপ্রিল রাতে থোয়াইঙ্গাকাটা এলাকায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে শাহীনের বিশ্বস্ত সেলিমকে হত্যা করে আবছার বাহিনী।

    জানা যায়, নিহত সেলিম একটি দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় মুখোশধারী ২৫-৩০ জন অতর্কিত হামলা চালিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে বাবা জাফর আলমকে গুলি করে হত্যার পর পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

    চোরাচালানে সম্পৃক্ততার বিষয় অস্বীকার কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন বলেন, এসব কাজে আমি কখনো জড়িত নই। এক বছর আগে থেকে আমার নাম ব্যবহার করার বিষয়টি আমি জেনেছি। সে সময় কেউ আমার নাম ব্যবহার করে থাকলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে বলে রেখেছিলাম। সেখানে আমার ভাই থাকলেও বাদ না দিতে বলেছিলাম। তার দাবি, চোরাচালানে আমার অনুসারী যাদের নাম আসছে তারা স্থানীয় এমপিরও অনুসারী।

    কচ্চপিয়া ইউপি সদস্য শাহজাহান সিরাজ শাকিল সিকদার প্রকাশ শাকিল মেম্বার ও যুবলীগ নেতা নাছির উদ্দিন সোহেল সিকদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হয়তো কেউ কেউ আমাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। অথচ আমরাই অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাচ্ছি।

    পুলিশের অভিযান শুরুর পর মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় শাহীন বাহিনীর প্রধান শাহীনের এবং আবছার বাহিনীর প্রধান আবছারের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এসব ঘটনার বিষয়ে জানতে গর্জনিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি সাইফুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি অভিযানে আছেন উল্লেখ করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

    রামু থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান বলেন, বাবা-ছেলে হত্যার ঘটনায় আবছার ও জাহাঙ্গীর নামে দুই ডাকাতের নামে উল্লেখ করে ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত দিয়ে মামলা করেছেন নিহতের ছেলে রুম্মান উল্লাহ। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।

    চোরাচালানিদের কাছ থেকে গরু প্রতি টাকা পাওয়ার বিষয় অস্বীকার করে ওসি বলেন, পাচারকারীদের সহযোগিতার প্রশ্নই আসে না। পুলিশের নামে কেউ টাকা নেওয়ার কথা বললে তা অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়।

    কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে পুলিশের কোনো কাজ নেই। তারপরও পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…