দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ঢাকার কেরানীগঞ্জে লড়াই হতে যাচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগের নেতাদের নিজেদের মধ্যে। তবে নির্বাচনের আগে থেকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে সরে এসে সরকার পতনের আন্দোলনে নেমেছে। তাই এবারো উপজেলা নির্বাচনে মাঠে নেই বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা করেছেন।
কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও ২ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা সবাই স্থানীয় ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি চতুর্থবারে মতো কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন।
চেয়ারম্যান পদে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বিপ্লব। তিনি কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এবং ২০০৪ সনের ২১ আগস্ট, গ্রেনেড হামলায় তিনি বোমা হামলায় আহত। তখন তার দুই পায়ে ২০টির বেশি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছিল। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক মনির হোসেন (তালা)। এছাড়াও শাক্তা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন লিটন (মাইক প্রতীক)। এই পদে আরও নির্বাচন করছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন (টিউবওয়েল)।
এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন ফরম জমা দিলেও শেষমেষ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ঢাকা জেলা গনফোরামের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আসমা আক্তার (কলস)। এই পদে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছেন মডেল থানা যুব মহিলালীগের সহ সভাপতি শান্তি আক্তার (সেলাই মেশিন)।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় দুই প্যানেলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। ঢাকা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি ও ঢাকা-৩ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি দুটি প্যানেলকে আলাদা আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ আর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও অনেকটা উৎসব মুখর পরিবেশে চলছে ভোটের প্রচার-প্রচারণা।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গ্রাম, গঞ্জ, হাট, জনপদ ভোটার প্রার্থীর পদচারণায় মুখর। সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করতে চান ভোটাররা। এদিকে শেষ মুহূর্তেও ভোটারের দ্বারে দ্বারে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। সুষ্ঠু ভোট হলে নির্বাচিত হওয়ার আশা সব প্রার্থীরই।
আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন আহমেদ বলেন, কেরানীগঞ্জে তিন বার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি। এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে আমার চেয়ারম্যান থাকাকালীন উন্নয়ন হয়নি। উপজেলার জনসাধারণ আমাকে চায়।
তাদের সুখে-দুঃখে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও পাশে থাকতে চাই। এবং আমি আশা করি, কেরানীগঞ্জের জনগণ আমাকে পুনরায় বিপুল ভোট জয়যুক্ত করবে। কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপ্লব বলেন, আমার নির্বাচনে আসার মূল লক্ষ্য হচ্ছে পরিবর্তন। পরিবর্তন হবে সকল জায়গা সেটা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত ইত্যাদি। আমি পরিবর্তন করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা জেলা নির্বাচন অফিসার ও রির্টানিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রভাব খাটানোর কোনও তথ্য-প্রমাণ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংসদ সদস্যরা এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন এবং ভোট দিতে পারবেন কিন্তু নির্বাচনি কোনও প্রচার-প্রচারণা করতে পারবেন না।
মন্ত্রী-এমপিদের জনসভায় একই মঞ্চে উপজেলা নির্বাচনের কোনও প্রার্থী উপস্থিত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, কেরানীগঞ্জে সতজন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে। নির্বাচনের আচরণবিধি সংক্রান্ত সব বিষয় প্রার্থীদের অবহিত করা হয়েছে।
এমআর